দশমিনা (পটুয়খালী) প্রতিনিধি : পুত্র হারানো বেদনা আর চরম দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুন মৃধার পরিবারের। পরিবারে উর্পাজনক্ষম লোক না থাকায় দারিদ্রতা তাদেও নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। চার কন্যা সন্তানের মধ্যে বহু কষ্টে চার মেয়েকেই বিবাহ দিয়েছেন। এর মধ্যে ছোট মেয়ে রুবিনা আক্তার শ^শুরবাড়ির সাথে আলোচনা করে বাবা-মায়ের সাথে থেকে তাদের দেখাশোনা করছেন। প্রচন্ড দারিদ্রতার মধ্যেও সংসারের হাল ধরার আশায় ছোট মেয়েটিকে বিএ পাশ করালেও মিলছে না কোন চাকরী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা ও ছোট বোন রুবিনা বেগমের আবেদন প্রধানমন্ত্রী একটি চাকরীর ব্যবস্থা করে দিলে তারা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতো। ছেলে হারানোর বেদনায় আর বয়সের ভারে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে নিহত মামুন মৃধার বাবা-মায়ের শরীরে। এর মধ্যেও ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মামুনকে তারা ভুলতে পারেনি ১৯ বছরেও। বেঁচে থাকতে একমাত্র ছেলে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে চান মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা এবং মা মোর্শেদা বেগম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ছেলে হত্যার সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ করে আজও তারা বুক ফাটা বেদনায় আর্তনাদ করেন। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বাবা-মায়ের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে মাটিতে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন মামুনের বোনেরা।
২০০৩ সালে দশমিনা উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুরা ব্রজবালা রায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে মামুন ভর্তি হন ঢাকা কবি নজরুল ইসলাম কলেজে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় চুরমার হয়ে যায় মামুনের হতদরিদ্র বাবা-মায়ের স্বপ্ন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে গিয়ে ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মেধাবী ছাত্র মামুন মৃধা। পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীপুর গ্রামের দিনমজুর মোতালেব মৃধা ও গৃহিণী মোর্শেদা বেগমের এক ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে মামুন ছিল সবার বড়। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের।
মামুনের চাচা মোকছেদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কোন নেতাই খোঁজ রাখেনি মামুনের পরিবারের।
মামুনের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। ২০১৪ সালে ১৬ অক্টোবর ১০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।
মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, মামুন বেঁচে থাকলে হয়তো এখন তাদের অভাব অনটন দূর হতো। তিনি আরো বলেন, একমাত্র ছেলে হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর হলে তার আত্মা শান্তি পাবে।