দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : দশমিনায় টেস্ট পরিক্ষার ফিসের টাকা পরিশোধ না করতে পারায় শিক্ষকের বকাঝকা ও পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে বিষপানে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওসার আলমের বিচার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। গত মঙ্গলবার দুপুরে শত শত মানুষ আরজবেগী বাজারে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে আরজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অভিভাবক এসাহাক হাওলাদার, মনির হোসেন, সাবেক শিক্ষার্থী গাজী সাইদুর রহমান, সবুজ সরদার প্রমুখ। এসময় বক্তারা প্রধান শিক্ষকের কঠোর বিচারের দাবী জানান।
স্থানীয় প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার আরজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক প্রয়াত গোপাল চক্রবর্তীর ছেলে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় চক্রবর্তী অর্থাভাবে চলমান টেস্ট পরিক্ষার ফিস দিতে না পারায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওসার আলম তাকে গালমন্দ করেন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক পরিক্ষায় অংশ নিতে দেননি। এ ঘটনার অপমান সইতে না পেরে লজ্জা ও অভিমানে তন্ময় বিদ্যালয়ে বসেই বিষ পান করেন। বিষপানের কিছুক্ষণ পর বিদ্যালয় লাইব্রেরিতে সুস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তন্ময়কে বিদ্যালয়ের কর্মচারী মোঃ জামাল ও হেমায়েত হোসেন একটি আটোগাড়িতে করে দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। দশমিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তন্ময়কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। গত সোমবার বিকেলে তন্ময় পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তন্ময়ের মা জয়ন্তী চক্রবর্তী জানান, আমার ছেলে বিদ্যালয়ে পরিক্ষা দিতে গেলে বিদ্যালয়ের মরিয়ম ম্যাডাম ছেলেকে পরিক্ষার খাতা দেননি। তিনি আমার ছেলেকে বলেছেন, আগে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আয় তারপরে খাতা দেবো। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুমতি আনতে গেলে তিনি আমার ছেলেকে বিদ্যালয়ের সব টাকা পরিশোধ না করলে পরিক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে বকাঝকা করে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। তন্ময়ের চাচাতো বোন ও একই ক্লাসের শিক্ষার্থী লাবনী চক্রবর্তী (১৫) জানান, আমরা পরিক্ষার হলে পরিক্ষায় বসেছি তখন তন্ময় মরিয়ম ম্যাডামের কাছে খাতা চাইলে তিনি খাতা না দিয়ে অনুমতি নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওসার আলম মুঠোফোনে জানান, ওর বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তাই কোনদিন ওর কাছ থেকে আমরা টাকা-পয়সা নেইনি। ছেলেটি নেশায় আসক্ত ছিলেন বলে দাবী করেন তিনি। পরিক্ষায় কেন তন্ময়কে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি এবং বিদ্যালয়ে বসে কেন বিষ পান করলেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিম মিয়া জানান, বিষয়টি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
দশমিনা থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাটি জেনে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করেছি। তন্ময়ের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।