বাউফল(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : বাউফলের কাছিপাড়া ইউনিয়নের পাকডাল গ্রামের একটি মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আতিকুর (১২) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাউফল থানা পুলিশ। শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আতিকুর পার্শ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের মধ্য জিরাইল গ্রামের মো. সরোয়ার সরদারের একমাত্র ছেলে এবং কাছিপাড়া ইউনিয়নের পাকডালে অবস্থিত ফজলুর রহমান রাহিমিয়া দারুল উলুম নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার হেফজ শাখার শিক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, আতিকুর ওই মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করতো। শনিবার ভোর থেকে আতিকুরকে ছাত্রাবাসে না পেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজেন। তাকে না পেয়ে সকলের ধারণা করছিল আতিকুর পালিয়ে গেছে। শনিবার সন্ধার দিকে এনিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা চলতে থাকলে একই মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইলের (১৪) অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ সৃষ্টি হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এলাকার লোকজন এবং আতিকুরের স্বজনরা তাকে সত্য কথা বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে সে মাদ্রসার অদুরে ফজলুর রহমান মুন্সি বাড়ির মসজিদের সেপটিক ট্যাংক দেখিয়ে দেয়। সেখানে আতিকুরের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১০ টার দিকে মরদেহ উদ্ধার এবং ইসমাইলকে আটক করে। ইসমাইলের বাড়িও বাকেরগঞ্জে। তার পিতার নাম মো. মজিবুর রহমান। ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত কিনা তা জানার জন্য পুলিশ মাদ্রসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আতিকুরের এক নিকটাত্মীয় হাসান মাহামুদ জানান, আতিকুর তিন বছর ধরে ওই মাদ্রাসয় পড়াশোনা করছে। কোন ধরণের কোন অসুবিধার কথা শোনা যায়নি। অপর একটি সূত্র জানায়, ইসমাইল প্রায়ই আতিকুরকে বলাৎকার করতো। বলাৎকারের যন্ত্রণা সহ্য করতে নাে পেরে ঘটনা সে তার মা মোসা. হামিদা বেগমকে জানায়। মা ঘটনাি সম্পর্কে মাদ্রাসার শিক্ষকদের জানালে ইমাইল ক্ষিপ্ত হয়ে আতিকুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। শুক্রবার রাতেও তাকে বলাৎকার করা হলে সে শিক্ষকের কাছে বলে দেবে বললে ইসমাইল গামছা দিয়ে আতিকুরের গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে হত্যা করে এবং পরে মাদ্রাসার অদুরে মসজিদের সেফটিক ট্যাংকে মরদেহ রেখে আসে। যদিও মাদ্রাসার শিক্ষক ও পুলিশ এব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে ইমাইলের বিচার দাবি করে রাতেই মাদ্রাসা চত্তরে এলাকাবাসিরা বিক্ষোভ করে এবং মাদ্রাসায় ভাঙচুর চালায়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিচার হবে বলে বিক্ষোভকারীদের আস্বস্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
কাছিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এঘটনা হৃদয় বিদারক। ইসমাইলের একার পক্ষে এধরণের কাজ করা সম্ভব না বলে মনে হয়। পুলিশ তদন্ত করে জড়িতদের আটক করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এটিএম আরিচুল হক জানান, ঘটনা জানার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করি এবং ঘটনার সাথে জড়িত ইসমাইলকে আটক করি। রবিবার ভোরে পোস্টমর্টেমের জন্য পটুয়াখালী পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে ঘটনার সত্যতা নির্ণয় করা যাবে।