নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ। মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে একাধিক উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে মাদকাসক্তদের জন্য নিরাময় কেন্দ্র ও পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “যেকোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম যুবশক্তি। মাদক থেকে এ যুব সমাজকে মুক্ত রাখতে না পারলে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ইতোমধ্যে একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে সাতটি বিভাগীয় শহরে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। একইসঙ্গে মাদকাসক্তদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাদকের রূপও বদলেছে। নতুন ধরনের সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগস (NPS) মোকাবিলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সজাগ রয়েছে। এ ধরনের মাদককে আইনের আওতায় আনতে এবং কৌশলগত নজরদারি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪’ প্রণয়ন এবং অধিদপ্তরের প্রথম ব্যাচের অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টিও জানান উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেশব্যাপী মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে বর্তমানে ২ হাজার ৯৪৩ জন কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে কাজ করছেন ১ হাজার ৬২২ জন। যানবাহনের স্বল্পতা ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার সচেষ্ট।”
অনুষ্ঠানে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “নারী, শিশু ও কিশোরদের মাদক চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে তারা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে।”
মাদক একটি বহুমাত্রিক সমস্যা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। মাদকের বিরুদ্ধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে।” তিনি মাদকের চাহিদা হ্রাসে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা জোরদারের ওপরও জোর দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ। বক্তারা মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। মাদকবিরোধী কর্মকান্ডে বিশেষ অবদানের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান এবং তিনটি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া উপদেষ্টা ‘Annual Drug Report’ ও দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিরের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।