থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
বান্দরবানের থানচি উপজেলয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে সূভ সূচনা হলো মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ বরণের প্রাণের উৎসব মাহা “সাংগ্রাই পোয়ে”। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের শতাধিক পাড়া ও গ্রামে বর্ষবরণের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী নতুন পোষাকে সাজিয়ে সাজসাজ রব। সকল বয়সের সম্মিলিতভাবে পবিত্র মৈত্রী পানি বর্ষণের (জলকেলি) মাধ্যমে পুরাতন বছরের ক্লান্তিহীন কর্মকান্ডকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে অভিনন্দন জানানো হবে নতুনত্ব কর্মকান্ডে।
এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় মারমাদের মাহা সাংগ্রাই পোয়ে উৎসবকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলায় মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে উপজেলা সদরে বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুভ সূচনা হয়। শোভাযাত্রাটি উপজেলা সদরে জগুরুত্বপূর্ন স্থানের প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় মাল্টিপারপাশ হল রুমে শেষ হয়। এসময় ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরা বৈচিত্রময় ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এসময় মারমা সম্প্রদায়সহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি সম্প্রদায় ছাড়াও সমতল অঞ্চলে নারী পুরুষ স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয় মাল্টিপারপাশ হল রুমে মাহা সাংগ্রাই পোয়ে বিষয়ক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উৎযাপন কমিটি সভাপতি হ্লামংউ মারমা সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংগ্রাই উৎসবের শুভ সূচনা করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা। উৎযাপন কমিটি সহ-সভাপতি মেমংসিং মারমার সঞ্চালনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা: আবুল মনসুর, ভাইস-চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা,নারী ভাইস চেয়ারম্যান নুমেপ্রু মারমা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইমদাদুল হক, প্রেস ক্লাবের সভাপতি মংবোওয়াংচিং মারমা অনুপম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উবামং মারমা, বান্দরবান জজ আদালতে নবীন আইনজিবী সিংথোয়াইমং মারমা, ইউপি মেম্বার হ্লাচিংমং মারমা, থুইমংপ্রু মারমাসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্ধরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কেন্দ্রীয় সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইহ্লাঅং মারমা বলেন, গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে শংঙ্খ নদীর পাড়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, রাতে পাড়ায় পাড়ায় বিন্নি ধানের পিঠা উৎসব, আজ ১৫ এপ্রিল থানচি হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহারের ধর্ম দেশনা, শীল গ্রহণ, পিন্ড দান, আগামীকাল ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, ১৮ এপ্রিল মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পবিত্র মৈত্রী পানি বর্ষন ও মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মারমা সম্প্রদায়ের এই এতিহ্যবাহী এবারের সাংগ্রাই উৎসবের।
উদযাপন কমিটির সভাপতি হ্লামংউ মারমা বলেন, পবিত্র মৈত্রি পানি বর্ষন (জলকেলি) উৎসবের সময় তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থানের মাধ্যমে তরুনদের প্রান্তে নৌকা ভর্তি জলধারের জল, একটি করে মগ। একইভাবে তরুণীদের সামনে নৌকা ভর্তি জলাধারে জল রাখা থাকে। এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর হলো জলকেলি।
উল্লেখ্য পাহাড়ের চাকমা স¯প্রদায়রা এই উৎসবকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রাইয়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে “বৈসাবি”। মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণের এই উৎসব “সাংগ্রাই” নামে পরিচিত।