মোঃ গোলাম কিবরিয়া, সরিষাবাড়ী, জামালপুর :
১২ ডিসেম্বর, সরিষাবাড়ী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সমগ্র দেশ মুক্ত হলেও তৎকালীন জামালপুর মহকুমার সরিষাবাড়ী থানা হানাদারমুক্ত হয় বিজয় দিবসের ৪ দিন আগেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে এ দেশ স্বাধীন করতে সারা দেশের ন্যায় সরিষাবাড়ীর বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজ মাতৃভূমি রক্ষার জন্য এ উপজেলার ৭৪৪ জন যুবক একযুগে ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলার প্রতিরোধের মুখে চরমভাবে বাধা পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকলে প্রতিদিনই বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জল হয়ে উঠে। সরিষাবাড়ীর আরামনগর কামিল মাদ্রাসায় ছিল হানাদার বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় গোটা উপজেলায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সরিষাবাড়ীতে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ শতাধিক নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে।
১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর অতর্কিত হামলায় সরিষাবাড়ীর পিংনা এলাকার বারই পটল ফুলদহের পাড়ায় নিরীহ মুক্তিকামী ও ১১জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪২জন শহীদ হন। ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পান যে, দুই শতাধিক পাক সেনা স্থানীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহায়তায় জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে অবস্থান করছে। এই সংবাদ পেয়ে ওই রাতেই নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নাজিম বাহিনী, আনিস বাহিনী, রশিদ বাহিনী, লুৎফর বাহিনী ও ফজলু বাহিনী বিশেষ সাহসী ভুমিকা নিয়ে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় সারা রাত যৌথ অভিযান চালিয়ে সকল পাক সেনাদের পাকড়াও করতে সক্ষম হয়। পরদিন ১২ ডিসেম্বর ভোরে মিত্র বাহিনীর হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। ওই দিনই তৎকালীন এমপি মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ঐতিহাসিক গনময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সরিষাবাড়ী থানা শত্রæ মুক্ত ঘোষনা করেন।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মূখী আক্রমণে পাকিস্তানী দস্যুরা সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয় এবং সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত হয়। সরিষাবাড়ীর আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় মুক্তির গান। হানাদার মুক্ত হওয়ার আনন্দে মুক্তিকামী মানুষের ঢল নামে সারা শহরে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা সরিষাবাড়ী। মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসে এই দিনটি সরিষাবাড়ীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জল ও স্মরণীয়। সরিষাবাড়ী মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড যৌথভাবে বিজয় মিছিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও প্রীতিভোজসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।