মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা-মটমালিয়াট মাঠে এখন শত শত বিঘা জমিতে ফুটেছে কচুরিপানা ও শাপলা ফুল। এই ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন খোকসা উপজেলা আমবাড়িয়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মুক্তার হোসেন। মুক্তার হোসেন জানান, এই বছর করোনার কারণে মধুর চাহিদা ও দাম বেশি। প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। প্রতি কেজি মধু ৪শ থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুক্তার আরো বলেন, শুরুতে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করি। আমারএখন ১শ ৩৫টি বক্স আছে। ১৩৫টি বক্স থেকে সপ্তাহে ১৫০ কেজি মধু পাওয়া সম্ভব। তিনি আরো জানান, প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব এই ব্যবসা করে। এর মধ্যে থেকে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় মৌমাছি খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ। জানা যায়, মুক্তার ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলক মৌ-চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ে সাফল্য পাওয়ায় পরবর্তীতে মৌ-চাষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। শুরুতে মুক্তার মৌ-চাষীদের সহযোগিতায় রানী মৌমাছি সংগ্রহের কৌশল রপ্ত করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন রানী মৌমাছি। তারপর থেকেই তার আর মৌমাছি পালনে সমস্যা হয়নি। তিনি রবি মৌসুমে সরিষা ও ফাগুন মাসে আমের মুকুল থেকে বেশি মধু সংগ্রহ করেন। সেজন্য যে অঞ্চলে ফুল ও ফসল বেশি হয় সেসব জায়গায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেন। অপরদিকে স্থানীয় ফসলের পরাগায়নও ভালো হয় যার ফলে ঐসব এলাকায় ফসল বৃদ্ধি পায়। মুক্তার মন্ডল আরও জানান, সরকারিভাবে তাকে কোন সাহায্য দেওয়া হয়নি। ব্যবসা পরিধি বৃদ্ধির জন্য সহজ উপায়ে লোন এবং এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করা সহজ হলে মধু চাষে আরো অনেকেই উৎসাহিত হবে। ১৫০টি মৌমাছি বক্স থেকে বছরে প্রায় ১ টন মধু আহরণ করা সম্ভব। মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করে মুক্তার এখন বেশ সফল। মধু বিক্রি থেকে মুক্তারের আয় প্রতি মৌসুমে ৫ লাখ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। তার মধু উৎপাদন দেখে অনেক আগ্রহী ব্যক্তিরা তার কাছ থেকে মধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কুমারখালী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, উপজেলার চারহাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয় এবং এই বছর ৩ হাজার হেক্টর জমি এখন পানিতে টইটুম্বুর। কচুরিপানা ও শাপলা ফুল প্রাকৃতিকভাবে সেখানে শোভা ছড়াচ্ছে। সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে সময় নষ্ট করছেনা মুক্তারের মৌমাছি।