পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আতঙ্কে এলাকাবাসী; দুর্যোগে মানুষের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও জুলিয়া সুকায়না
তৃপ্তি রঞ্জন সেন, খুলনা প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এর প্রভাবে বুধবার দিনভর পাইকগাছায় ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এ জনপদের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সহায়তা হিসেবে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ ও ৩৩ মেট্রিক টন খাদ্য। মজুদ রাখা হয়েছে শুকনো খাদ্য সামগ্রী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়ণ কেন্দ্র। বুধবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে উপকূলীয় এ জনপদের ৩ লক্ষাধিক মানুষ। এদিন দিনভর ঝড়ো হাওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দেলুটি ইউনিয়নের জিরবুনিয়া, কালিনগর, সোলাদানার বয়ারঝাপার হাড়িভাঙ্গা ও গড়ইখালীর কুমখালী ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাস হলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। যদিও উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের তত্ত্বাবধানে দ্রুত বাঁধ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থাকলেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষকে নিজ নিজ বাড়ীতে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে দেখা গেছে প্রশাসনকে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সবধরণের প্রস্তুতি। ৬৫ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১৬১টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনসাধারণের জন্য খুলে রাখা হয়েছে। করোনাকে সামনে রেখে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার সুব্যবস্থা। সার্বিক মনিটরিং করার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের দুইটি করে টিম। ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। চেয়ারম্যানদের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে আনসার ও ভিডিপি। এদিকে ১০নং মহাবিপদ সংকেতের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বুধবার দিনভর পৌরসভা, সোলাদানা, লস্কর ও গড়ইখালীসহ উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সোলাদানার বয়ারঝাপা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত কাজে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন, প্যানেল চেয়ারম্যান বিএম আরেফিন ও পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানান, ফনি ও বুলবুল এর ন্যায় করোনার স্বাস্থ্যবিধিকে মাথায় রেখে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন চিহ্নিত করে সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসব এলাকা পরিদর্শন করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩৬টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১৬১টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যার আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সকল মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে। সহায়তা হিসেবে প্রায় ৩ লক্ষাধিক নগদ অর্থ ও ৩৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মজুদ রাখা হয়েছে চিড়া, গুড়, মুড়ি ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন শুকনো খাদ্য সামগ্রী। প্রস্তুতির কোন ঘাটতি রাখা হয়নি উল্লেখ করে ইউএনও জুলিয়া সুকায়না জানান, মহান আল্লাহ ফনি ও বুলবুল এর ন্যায় এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তিনি আমাদের রক্ষা করবেন ইনশাল্লাহ।