টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের বাসাইল-সখিপুর সড়ক সম্প্রসারণের জন্য সড়কের উভয়পার্শ্বে সৃজিত সামাজিক বনায়নের বিপুল সংখ্যক গাছ নিলামে বিক্রি করা হলেও নিলামকৃত ওই সকল গাছ কাটতে ৩ বছর সময় পার করেছেন নিলাম ক্রেতা জনৈক নাছির খান।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল-সখিপুর সড়ক যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ কাজের ডি পি পি সরকারের একনেক সভায় অনুমোদিত হওয়ায় গত ৩০/০৮/২০১৮ সালে মোহাম্মদ আমিনুল এহসান, নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) সওজ, সড়ক বিভাগ টাঙ্গাইল ওই সড়কের উভয়পার্শ্বে বিদ্যমান বৃক্ষ অপসারণের প্রয়োজন দেখিয়ে টাঙ্গাইল বনবিভাগে একটি পত্র প্রেরণ করেন ।
ওই পত্রের প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল বনবিভাগ মার্কিং লিস্টের সারসংক্ষেপ তৈরি করে এবং ওই মার্কিং যাচাই বাছাই করে ২৮/০৫/২০১৯ ইং তারিখে টাঙ্গাইল বনবিভাগ প্রকাশ্য নিলাম আহ্বান করে। বাসাইলের জনৈক নাছির খান ওই নিলামে লট নং ০৩/টানা অব ২০১৮-১৯ ০১/সদর ঐ স্টিপ/১৪, মূল্য ৳ ৫৭০০০/ টানা অব ২০১৮-১৯ ০১/বাসা ঐ স্টিপ/১৪ মূল্য ৳ ৩০০০০, ০৬/ টানা অব ২০১৮-১৯ ০২/ বাসা ঐ স্টিপ /১৪ মূল্য ৳ ৪৩৬০০, ০৭/ টানা অব ২০১৮-১৯ ০৩/বাসা ঐ স্টিপ/১৪ মূল্য ৳ ৫৬০০০। ০৯/ টানা অব ২০১৮-১৯। ০৫/ বাসা ঐ স্টিপ/ ১৪ মূল্য ৳ ২৩৮০০, ১০/টানা অব ২০১৮১৯ ০৬/ বাসা ঐ স্টিপ /১৪ মূল্য ৳ ৪৭৫০০। ১১/২০১৮-১৯ ০৭/বাসা ঐ স্টিপ/১৪, মূল্য ৳ ৪৪৩০০ এবং ০২/০৭/২০১৯ নিলামকৃত লট নং ০৪ /টানা অব ২০১৮-১৯, ০২/ সদর ঐ স্ট্রিপ /১৪, মূল্য ৳ ১২৬২০০, ০৮/ টানা অব ২০১৮-১৯, ০৪/টানা বাসা ঐ স্টিপ /১৪, মূল্য ৳ ১৪৮০০০ ও ১২/ টানা অব ২০১৮-১৯, ০৮/ বাসা ঐ স্টিপ/ ১৪ মূল্য ৳ ১১৭২০০ সহ মোট ১০টি লটের নিলাম ক্রয় করেন।
নিলামের শর্তানুযায়ী উল্লেখিত লটগুলোর বিপরীতে ৫০% অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে এবং অবশিষ্ট টাকা পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করে কার্যাদেশ গ্রহণ করে নিলামকৃত গাছ কর্তন করে স্থানান্তরের বাধ্যবাধকতা আছে।
বিধি মোতাবেক নিলাম বিক্রয়ের ২ মাসের মধ্যে ক্রয়কৃত বনজ দ্রব্যাদি স্থানান্তর না করলে বা ব্যর্থ হলে, নিলামকৃত দ্রব্যাদি সরকারী সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হবে। এক্ষেত্রে নিলাম ক্রেতার কোন দাবী গ্রাহ্য হবে না বলে পরিষ্কার বলা আছে। অথচ কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে বাসাইল উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা নাছির খান বনবিভাগের দূর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রাস্তার দু’পার্শ্বের গাছ কর্তন না করে রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাস এন্টারপ্রাইজ রাস্তার পাশে সামাজিক বনায়নের সৃজিত গাছসমূহ রেখেই কোনমতে রাস্তার কাজ শেষ করেন বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজ এর জনৈক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সরকারি কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। বাসাইল সখিপুর রাস্তার সামাজিক বনায়নের সৃজিত গাছের উপকারভোগী অংশীদার জনৈক ব্যক্তি জানান, সরকারি রাস্তার উন্নয়নের কথা বলে অপ্রাপ্ত বয়সের গাছ কমমূল্যে নিলাম করা হলো। আমরা কাক্সিক্ষত মূল্য পেলাম না, অথচ নির্দিষ্ট সময়ে রাস্তার গাছ কর্তন না করে ৩ বছর রাখার ফলে ওই গাছগুলো বড় ও মোটাতাজা হওয়ার ফলে নাছির খান অধিক মূল্যে ওই গাছ বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা উপকারভোগী নিরীহ অংশীদার ও সরকার।
টাঙ্গাইল বনবিভাগের সরকার প্রদত্ত অর্থের রসিদ নম্বর ০৪৮১৬১ তারিখ ১৩/০৫/২০১৯ জনৈক দেবব্রত ফরেস্টার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, টাঙ্গাইল, নার্সারী মাত্র ২৪০০ টাকা রসিদ নং ০১৯১৭৭ তারিখ ১৪/০১/২০২০ ২৩৮০ টাকা, ১৪/০১/২০২১ তারিখ ৪৪৩০০ টাকা ২৩/০২/২০২০ তারিখ ৪৭৫০০ টাকা, তারিখ ২৩/০২/২০২০, ১১৭০০ টাকা, তারিখ ০১/০৬/২০২১, ১৪৮০০ টাকা ও রসিদ নম্বর ০৫১১০৭, তারিখ ০৮/০৬/২০২১, ৫৭০০০ টাকা, রসিদ নং ০৫১১০৮ তারিখ ০৮/০৬/২০২১, ৫৬০০০ টাকা, রসিদ নং ০৫১১১৩ তারিখ. ২২/০৮/২০২১, ৩০০০০ টাকা, রসিদ নং ০৫১১১৪, তারিখ ২২/০৮/২০২১, ৪৩৬০০ টাকা, রসিদ নম্বর ০৫১১১৫, তারিখ ২২/০৮/২০২১, ১২৬২০০ টাকা, রসিদ নং ০৫১১১৮, তারিখ ২২/০৮/২০২১, ৩০০০০ টাকা প্রদান করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি নিলামের টাকা সঠিক সময়ে পরিশোধ না করে রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং সর্বোপরি গাছ সরাতে বিলম্ব করে গাছগুলো বেড়ে ওঠে এবং বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ওই নাছির খান ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন। সরকার তার কাক্সিক্ষত রাজস্ব হতে বঞ্চিত হন ও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী অংশীদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।
বনবিভাগের নিলামকৃত বনজদ্রব্যাদি সঠিক সময়ে অপসারণ না করায় এবং ওই রাস্তায় পুনরায় গাছ লাগানোও প্রলম্বিত হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কার স্বার্থে আর কেনইবা রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে কচি গাছগুলো স্বল্পদামে নিলামে বিক্রি করা হলো? এসবের পিছনেও কি ওই নাছির খানের হাত ছিল কি – না তা খতিয়ে দেখা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।