তোফায়েল আহমেদ, সিলেট মহানগর প্রতিনিধি
বিপদগ্রস্ত মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে ৯৯৯। নাগরিকের জরুরী প্রয়োজনে মুঠোফোন থেকে সম্প‚র্ণ টোল ফ্রি ও বিনা পয়সায় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছে। সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। প্রথম দিকে পরীক্ষাম‚লক শুরু করলেও, খুব কম সময়ে সাফল্য পেয়েছে জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইনের এই নম্বর। এ সার্ভিসের ফোন করার পর ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মেলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরেকটু বেশিও হয়। সেবাটি যাত্রার পর থেকেই সাধারণ মানুষ উপকৃত হওয়ার গল্প গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়। চলতি বছরের এগারো মাসে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় থানায় ৩৯১টি কল আসে। এরমধ্যে বেশির ভাগ পারিবারিক, জুয়া, মাদক, বাখাটেদের উৎপাত, ইভটিজিং, জমি সংক্রান্ত বিরোধ। সারাদেশের ন্যায় সিলেটের মানুষও বিপদে, দুর্ঘটনা কিংবা অপরাধের শিকার হলে নাম্বারটিতে ফোন কল করলেই দ্রæত সেবা পাচ্ছেন। বেড়েছে সাধারণ মানুষের আস্থা। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরী সেবা পেয়েছেন মানুষ। বাঙালির নাকি চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে! কোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে বা যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে আমরা দিশেহারা হই। কাকে জানালে সাহায্য পাওয়া যাবে, সেই বিষয়টিও তখন মাথায় থাকে না। এসএমপি সুত্র জানায়, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয়টি থানায় জরুরী সেবা প্রদানের জন্য ১১ মাসে মোট ৩৯১টি কল আসে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী আসে কোতোয়ালি মডেল থানায়। এ থানায় জরুরী সেবার জন্য ১৩৯টি ফোন কল আসে। এরপর দক্ষিণ সুরমা থানায় ৯৪টি, শাহপরান (রহঃ) থানায় ৭১টি, জালালাবাদ থানায় ৩৮টি, মোগলাবাজার থানা ৩৪টি ও এয়ারপোর্ট থানা ১৫টি জরুরী ফোন কল আসে।
সুত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেবা চালু হয়। পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি জরুরী কল সেন্টার হলো ৯৯৯ জরুরী সেবা। এ সেবা থেকে শুধু পুলিশ নয়, জরুরী প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ সেবা। ৯৯৯ এ ফোন করতে কোনো খরচও নেই, এটি টোল ফ্রি। বিটিআরসি সুত্রে জানা যায়, সরকারী বিভিন্ন সংস্থার সেবা এখন ঘরে বসে মুঠোফোন ও ল্যান্ডফোনেই পাওয়া যাচ্ছে। ৫৪টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ‘হেল্পলাইন’ চালু করেছে। এমনকি রাস্তায় কোনো বিপদে বা দুর্ঘটনায় পড়লে একটি নম্বরে ফোন করলেই দ্রæত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাস্তায় কাউকে অপরাধের শিকার বা দুর্ঘটনায় ভুগতে দেখে মনঃকষ্ট নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে না। ৯৯৯ এ ফোন করে আপনি আপনার দায়িত্বটুকু পালন করতে পারেন। অনেক মানুষই এ ধরনের ঘটনা দেখে এড়িয়ে যান পরবর্তী সময়ে ‘পুলিশি ঝামেলা’র কথা ভেবে। ২৪ ঘণ্টা জরুরী সেবা : নাগরিকদের জরুরী সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় জরুরী সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯। দুর্বৃত্ত আক্রান্ত নারী কিংবা প্রভাবশালীদের কবলে পড়া অসহায় মানুষের জায়গা উদ্ধারে ভ‚মিকা রেখেছে ৯৯৯। আশপাশ থেকে সচেতন নাগরিকদের ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নির্বাপণও করেছে। ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাণীকেও। গত ১১ মাসে ৯৯৯ সেবায় বলার মতো আরো অনেক গল্প আছে। জাতীয় জরুরী সেবা সম্পর্কে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশিনার (মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস) মো. জেদান আল মুছা বলেন, শুরুতে প্রচুর কৌত‚হলী মানুষের ফোন আসত। যে কোনো ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করলে তাঁর পরিচয় (মুঠোফোন নিবন্ধনের সময় দেওয়া তথ্য) ও অবস্থান সেবাদানকারীর কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠবে। উন্নত দেশগুলোর জরুরী সেবা এভাবেই চলছে। ৯৯৯-এ ফোন করে কাউকে পরবর্তী সময়ে কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হবে না উলেখ করে জেদান আল মুছা বলেন, এখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তাঁর তথ্য প্রকাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।