আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট:
জাতীয় যুব পুরস্কার ‘আত্মকর্মী পদক’এর বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সিলেট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধিন জাতীয় যুব পুরস্কার ‘নারী আত্মকর্মী পদক’ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক আলা উদ্দিন ও সদর উপজেলা কর্মকর্তা আজহারুল কবির। তারা ২০১৯-এ সিলেট সদর উপজেলায় ‘প্রকৃত আত্মকর্মী’ নয় এমন একজনকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করে পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ কারীদের বক্তব্য- সিলেট সদর উপজেলার মেজরটিলার এলাকার শাহিদা বেগমের জাতীয় যুব পুরস্কার ‘নারী আত্মকর্মী পদক’ পাওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। শাহিদা বেগম কখনও যুব উন্নয়নের ধারে-কাছেও আসেননি। তিনি মূলত: একজন গৃহিনী। তার নিজের নামে নেই কোনো প্রতিষ্ঠান। শাহিদার ভাই মো. তৌফিকুল ইসলাম (ছাব্বির)-এর নামে যে প্রতিষ্ঠান আছে এটার সাইনবোর্ডে সাময়ীকভাবে শাহিদা বেগম লিখে তাকেই ‘আত্মকর্মী পদক’ পাইয়ে দেন ওই দুই কর্মকর্তা। অন্যদিকে, যারা যুব উন্নয়নের স্বার্থে ১০-১১ বছর যাবত কাজ করে আসছেন কিংবা যারা প্রকৃত ‘আত্মকর্মী’ তাদের আদৌ মূল্যায়ন করা হয়নি। সঠিক প্রোফাইল গায়েব করে ভূয়া প্রোফাইলগুলো সিলেট থেকে মনোনীত করা হয়।নিয়ম অনুযায়ী- যে উপজেলার কর্মী বাছাই করা হয় সে উপজেলার কর্মকর্তা প্রথমে ফাইল প্রস্তুত করে সেটা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছে পাঠান। পরে সেটা ৪ সদস্য বিশিষ্ট সিলেটের একটি কমিটি যাছাই করেন। সে কমিটিতে থাকেন সিলেটের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় উপ-পরিচালক এবং যুব উন্নয়নে সমাজে অবদান রাখা এমন দুইজন ব্যক্তি। জানা গেছে, শাহিদার প্রোফাইল জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে দেখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন। এসময় শাহিদার প্রোফাইলটি ‘সত্য’ বলে তার সামনে উপাস্থাপন করেন উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।এছাড়াও নিয়ম রয়েছে- জাতীয় যুব পুরস্কার-এর ‘আত্মকর্মী পদক’ প্রাপ্তদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। ওই কর্মীর কর্মস্থল বা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে হয় সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের একটি টিমকে। যাছাই করতে হয় প্রোফাইল জমা দেয়া নারীর ব্যাংক হিসাব ও প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে- শাহিদার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই পালন করেননি আলাউদ্দিন ও আজহারুল। গতবছর বাছাই কমিটিতে থাকা একজন হচ্ছেন জাতীয় আত্মকর্মী পদকপ্রাপ্ত এম এ নাসির সুজা। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কমিটিতে থাকা চতুর্থ ব্যক্তি সিলেট যুব পদকপ্রাপ্ত ফোরাম (প্রযুস)-এর সাধারণ সম্পাদক আফিফুর রহমান আফিফের বলেন, সমস্থ নিয়ম মেনেই শাহিদার প্রোফাইল বাছাই করা হয়েছে। আজহারুল কবিরের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি গাইবান্ধা শহরের কলেজ হোস্টেল রোড এলাকার মো. খোরশেদুল আলমের ছেলে। ২০০৮ সালে গাজীপুর কার্যালয়ে চাকরিকালে একটি পত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের খোদ মহাপরিচালকের স্বাক্ষর জাল করেন তিনি। পরে সেটা তদন্তে প্রমাণিতও হয়। এর দায়ে সাময়ীক বরখাস্ত হন আজহারুল। বরখাস্ত কালীন তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও আজহারুল ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ইউনিট থানা কার্যালয়ে চাকরিকালে সরকারি বরাদ্দকৃত ঋণের ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে ওই টাকার সার্ভিসচার্জসহ মোট ৫ লক্ষ ৩৮ প্রদান করে দায় থেকে মুক্তি পান তিনি। শাহিদা বেগমের প্রোফাইলের বিষয়ে সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যালয়ের কর্মকর্তা আজহারুল কবির বলেন, ওই পুরস্কার প্রাপ্তি বা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার কোনো হাত নেই। কারণ- সেটা বাছাইয়ের জন্য আলাদা কমিটি আরেছ, যে কমিটিতে আমি নেই। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নেই। এ প্রসঙ্গে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক আলা উদ্দিন কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনাকে ফোনে কিছু বলতে পারবো না। কিছু জানার থাকলে আপনারা অনুসন্ধান করেন অথবা আমার অফিসে এসে জেনে যান। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, উপ-পরিচালক আলা উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে আমাদের করছে। মৌখিভাবে তাকে প্রশ্নও করা হয়েছিলো এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে- উনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এবং অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তারপরেও বিষয়টি আমরা দেখছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে পাঠানো হবে। তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।