এম এ রউফ , সিলেট
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের রহিমপুরী খালের শরীফগঞ্জ বাজারের কাছে নির্মিত বাঁধটি এলাকার চাষীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীফগঞ্জ বাজার থেকে সুলতানপুর ইউনিয়নের তিরাশী গ্রাম পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি ঐ বাঁধের কারণে পানিশ‚ন্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের ভাষায় খালটি মরতে বসেছে এবং সংশ্লিষ্ট পাঁচ ইউনিয়নের চাষাবাদযোগ্য ভ‚মিও মরুভ‚মিতে রূপ নিচ্ছে।
এক সময় খুবই গভীর এই খালে সারা বছর পানি থাকতো এবং পাওয়া যেত প্রচুর মৎস্য সম্পদ। কিন্তু এখন এই অবস্থা আর নেই। সামান্য পানি থাকে খালে। তাছাড়া পুরো খালটি কচুরিপানায় ভরা। এ কারণে উপজেলার সুলতানপুর, বারঠাকুরী, কসকনকপুর, কাজলশাহ, মানিকপুর ও জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রামের জমিতে চাষাবাদ ব্যাহৃত হচ্ছে।
স্থানীয় স‚ত্র জানায়, শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদের সুবিধা বাড়াতে ৩ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঐ খালে বাঁধ নির্মাণ করে। এর সঙ্গে নির্মাণ করা হয় একটি পাম্প হাউজ। কিন্তু বাঁধে এলাকার মানুষের উপকারের পরিবর্তে অপকারই বেশি হচ্ছে। খালে আর আগের মতো পানি প্রবাহ থাকে না। শুস্ক মৌসুমে দেড় শতাধিক গ্রামে পানির অভাবে চাষাবাদ হচ্ছে না।
স¤প্রতি পানিসম্পদ সচিব জকিগঞ্জ সফরে এলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যাটি তাকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি জানানো হয় পানি সম্পদ মন্ত্রীকেও। এরপরও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসী জানান, খালে নির্মিত বাঁধটি বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে পড়েছে। কিন্তু বিএসএফ এর প্রবল আপত্তির কারণে পাউবো বাঁধটি কাটার উদ্যোগ নিয়েও পারেনি। এখন কাছাকাছি স্থানে থেকেই বাঁধ পাহারায় ক্যাম্প স্থাপন করেছে বিএসএফ। বাংলাদেশীদের চাষাবাদের সুবিধার্থে বাঁধটি কেটে দেওয়ার জন্য স¤প্রতি ভারতের শিলচরে দুই দেশের মধ্যে বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে যৌথ নদী কমিশনে বিষয়টি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমস্যার ব্যাপারে বারঠাকুরী ইউপির চেয়ারম্যান মহসিন মোর্তুজা চৌধুরী টিপু বলেন, বাঁধটি কেটে না দেওয়া হলে খাল সংলগ্ন ৫টি ইউনিয়ন পানির অভাবে এক সময় মরুভ‚মিতে পরিণত হবে।
একই এলাকার বাসিন্দা হাসিতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জানান, বাঁধ নির্মাণের কারণে খাল দিয়ে উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, বাঁধটি কাঁটার জন্য বারবার আলোচনা করে যাচ্ছি। যখনই সিদ্ধান্ত হবে, তখনই বাঁধটি কেটে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ বলেন, যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক ছাড়া সমস্যাটির সমাধান হবে না।