রফিকুল ইসলাম,সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের আম বাগানের ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতাটি আজও মনে করিয়ে দেয় হারানো দিনগুলোকে। মুকুলের সমারোহে বাতাসে বইতে শুরু করেছে এর ঘ্রাণ। ব্যাকুল হয়ে ছুটছে মৌমাছির দল। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সিরাজগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক আম উৎপাদিত হবে। অন্যদিকে গাছ ও ছোট ছোট বাগানের মালিকরা এ বছর আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। এ সকল বাগানগুলোতে গোপালভোগ, গুটি আম, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, ফজলি, সুরমা, চোষা, আশ্বিনাসহ দেশীয় জাতের আমের চাষ করা হয়। রায়গঞ্জের উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বাগান মালিক পরিক্ষিত সাহা জানান, আমার বাগানে বেশ কিছু জাতের আম গাছ রয়েছে। কিছু গাছে এরই মধ্যে মুকুল এসেছে, এখনও অনেক গাছে মুকুল আসেনি। তবে এই সময়টা আমাদের খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়। মুকুল রক্ষায় এই সময়টাতে আম গাছে ব্যাপক পরিচর্যা দরকার। তা না হলে আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষি শ্রমিক দিয়ে কাজ করছি। দেখা যায়, সারি সারি গাছের ডালে শোভা পাচ্ছে হলুদ আর সবুজের মহামিলন। গাছের প্রতিটি ডাল পালায় মুকুল ছেয়ে যাচ্ছে। চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে মুকুলের পাগোল করা ঘ্রাণ। ছাড়াচ্ছে সেই মুকুলের গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিতসহ মুকুলের আশপাশে মৌমাছির আনাগোনা। অনেকেই মুকুল রক্ষা করতে গাছে গাছে ওষুধ দিতে দেখা গেছে। তবে অনেক গাছের মালিক মনে করেন, এ বছর আমের ফলন নির্ভর করছেন আবহাওয়ার ওপর। কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল গ্রামের গোলাম রসুল বাবু বলেন, আমার বাড়িতে এখনও ২৫/৩০টি আমের গাছ রয়েছে। ছোট এই বাগানটিতে নিয়মিতভাবে মুকুলের পরিচর্যা করে থাকি। তিনি আরও বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেবার পরে এখন আমি আমসহ বিভিন্ন গাছপালার পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে সময় পার করি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আমের ফলন গত বারের চেয়ে ভালো হবে। আমবাগান মালিক সালাম বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছে গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। পোকমাকড় ও অন্যান্য রোগবালাই থেকে মুকুল রক্ষা করতে পরিচর্যার শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী মুকুল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছে। এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় সকল আম গাছগুলোতেই মুকুল এসেছে। মুকুল রক্ষায় কৃষকদের মোট তিনবার ¯েপ্র করার পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে পোকাসহ অন্যান্য রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুজাফর মো. আহসান শহীদ সরকার জানান, সিরাজগঞ্জে এ বছর ৪শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই গাছে ব্যাপক মুকুল আসতে শুরু করেছে। কৃষিবিভাগ থেকে আমের মুকুল পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আমচাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।