রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : উপমহাদেশে মুঘল আমল থেকে ব্রিটিশ শাসনামল এবং পাকিস্তান আমলেরও কিছুটা সময় পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। জমিদারদের বাড়িগুলোকে মানুষ জমিদার বাড়ি হিসাবে জানতো। কালের বিবর্তনে বাংলার মাটি থেকে জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও মুছে যায়নি তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক পুরনো জমিদার বাড়ি।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোর নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আটঘড়িয়া জমিদার বাড়ি তারই একটি। দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে বাড়িটির অবস্থা খুব নাজুক হলেও এর দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব বিরাজমান।
জানা যায়, আটঘরিয়ার জমিদার ছিলেন উৎসব নারায়ণ চক্রবর্তী। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদার হন তার দুই ছেলে হিমেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী ও ধীরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী। জমিদারি প্রথা বিলোপের পর ছেলেরা বাড়িটি কিছু দিন দেখভাল করার পর মূল সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে দেন তাদের কাজের মেয়ে কুলছুম বিবিকে। কুলছুম বিবিকে তারা জনৈক ইব্রাহিম হোসেনের সাথে বিয়ে দিয়ে ১৯৬৯ সালে বাড়িটির সাত বিঘা জমি তাকে সাফকবলা করে দেন। এর কিছুদিন পর তারা মারা যান এবং ওয়ারিশরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরে কুলছুম বিবি জমিদার বাড়িতে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও তিনি স্থানীয় আটঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৬০ শতক জমি দান করে দেন। জমিদারদের বাকি পাঁচ বিঘা জমির ওপর ভূমিহীন প্রায় ৩০টি পরিবার বসবাস করায় এখন তাদেরকে এই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ভূমিহীনরা জমিদার বাড়ি ছেড়ে চলে না যাওয়ায় তাদের ওপর নির্যাতন চলছে এবং তাদের চাষকৃত পুকুরের মাছ মেরে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে বাধা দিলে তাদের ওপর চলে নানা রকম নির্যাতন। জমির মালিক বাদি হয়ে সিরাজগঞ্জ আদালতে মামলা করার পরও তাদের ওপর নির্যাতন থেমে নেই।
জমিদারদের কবলা সূত্রে জমিদার বাড়ির বর্তমান মালিক কুলছুম বিবি জানান, জমিদার বাড়িতে আমি কাজের মেয়ে হিসাবে কাজ করায় আমাকে জমিদাররা ইব্রাহিম হোসেনের সাথে বিয়ে দেন। বিবাহ সূত্রে আমার স্বামী জমিদার বাড়িতে সেসময় তাদের দেখাশোনাসহ নানা কাজ করতেন। জমিদাররা একসময় এই বাড়ির জায়গা আমার নামে কবলা করে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই এই বাড়িতে সন্তান আর স্থানীয় ভূমিহীন প্রায় ৩০টি পরিবার নিয়ে আমরা বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য নানা রকম অত্যাচার ও হয়রানি করে আসছে একটি মহল। আমরা আদালতে মামলা করার পরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
এ বিষয়ে কুলছুম বিবির বড় ছেলে বাদশা হোসেন বলেন, জমিদারদের কবলা সূত্রে আমরা ছোটবেলা থেকেই এই বাড়িতে বসবাস করে আসছি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদেরকে উচ্ছেদ করে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেই চলছে। জমিদারদের জমিতে ৯৫ শতাংশ পুকুরে আমি তিন লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে সব মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে।
এ বিষয়ে ধানগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ওবায়দুল ইসলাম মাছুম বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়ি নিয়ে বর্তমানে মামলা চলমান আছে। আদালতের রায় অনুযায়ী জমিদার বাড়িটি এক পক্ষ ভোগদখল করবে।
জমিদার বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলায় যে পক্ষ রায় পাবে তারাই জমিদার বাড়িটিতে বসবাস করবেন।