তোফায়েল আহমদ, সিলেট মহানগর প্রতিনিধি
ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই হলে নিশ্চিত হয়ে বাজি ধরা যায় না কারো পক্ষে। শেষ হাসি কে হাসবে, নিশ্চিত না হয়ে বাজিকররা তবুও বাজি ধরেন কারো না কারো পক্ষে। ক্রিকেটের বাজিকররা যদি সিলেটে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে মাঠে নামতেন, তবে তারাও বোধহয় খেই হারিয়ে ফেলতেন। সব অনুমান, সব হিসেব নিকেশকে ভুল প্রমাণ করে দিলো সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ দুই ইউনিটে যে চারটি নাম এসেছে তাদের পক্ষে নাম ঘোষণার আগ পর্যন্তও বাজি ধরার লোক বোধহয় খুব একটা বেশি ছিলো না সিলেটে। জেলা ইউনিটে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সঙ্গী পেয়েছেন অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানকে। মহানগর ইউনিটে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার সঙ্গী হয়েছেন জাকির হোসেন। নতুন নেতৃত্ব পাওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই রাজনীতির বাইরে পেশাজীবী হিসেবেও পরিচিত- জেলার দুই নেতাই আইনজীবী, আর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক একটি বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনায় যুক্ত। মহানগরের সভাপতিই কেবল ‘ফুলটাইম রাজনীতিবিদ’।
অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, এতোদিন ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ভারমুক্ত হয়ে এখন তিনি নতুন সভাপতি। তার মতো বর্ষীয়ান নেতা সিলেটে কেনো, বাংলাদেশেও হাতে গোনা। বয়সের কারণে লুৎফুর রহমান লড়াইয়ে থাকতে পারবেন কিনা এ নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিলো। এ কারণে স্থানীয় আলোচনার টেবিলে অনেকেই তাকে বাদ দিয়ে রেখেছিলেন। ‘বাজির ঘোড়া’ হিসেবে তাকে বেছে নিতে কারোর তেমনই আগ্রহ ছিলো না। তবে এমপি-মন্ত্রী’কে পেছনে ফেলে বাজিমাত শেষ পর্যন্ত তিনিই করেছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তার উপর আস্থা রেখেছেন। তিনি হয়তো নেত্রীকে আশ্বস্ত করতে পেরেছেন, তার ‘দম’ এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
মাসুক উদ্দিন আহমদ নিজেও কি ভেবেছিলেন তিনি মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। মঞ্চে উঠার আগ পর্যন্তও বোধহয় তার মাথায় এ চিন্তা খেলা করেনি। তিনি যে আলোচনায় ছিলেন না, তা কিন্তু নয়, তবে লড়াইয়ে ছিলেন জেলার শীর্ষ পদটির জন্য। মহানগরের সভাপতি পদে তিনি নন, আলোচনায় ছিলেন তারই ছোট ভাই আসাদ উদ্দিন আহমদ। ভাইয়ের স্বপ্ন বোধহয় ভেস্তে দিতে চাননি মাসুক উদ্দিন। তবে নেত্রীর পছন্দ বলে কথা।
অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, ব্যবসায়ী-আইনজীবী। তিনি অবশ্য আলোচনায় ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। তবে আলোচনার ডালপালাগুলো তাকে নিয়ে খুব একটা বিস্তৃত ছিলো না। তার গ্রুপের কর্মী হিসেবে যারা পরিচিতি ম‚লত তারাই ব্যানারে- ফেস্টুনে-ফেসবুকে নাসির উদ্দিনকে আলোচনায় চাঙ্গা রেখেছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় থাকা বিদায়ী কমিটির আরো দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এক সহসভাপতিকে ডিঙিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন নাসির উদ্দিনই।
জাকির হোসেন। সিলেট শহরতলির টুকেরবাজারস্থ শাহ খুররম কলেজে অধ্যাপনার সাথে যুক্ত। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনিও আলোচনায় ছিলেন। নিজের গ্রুপ নেই, কর্মী বাহিনী নেই- ‘হেভি’, ‘হেভি’ নামের বিপরীতে তাই তিনি অনেকটাই অনুজ্জ্বল ছিলেন। তবে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার সম্মেলন স্থলে হাতে গোনা উজ্জ্বল মুখগুলোর একটি হয়েছেন এ জাকির হোসেনই।