মোঃআলতাফ হোসেন আল-আব্বাসী, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
বনাঞ্চলের গাছ ও সম্পদ রক্ষার্থে আইন করে ৫ কিলোমিটারের মধ্য করাতকল স্থাপনের বিধি-বিধান উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আওতায়, বাঁশতৈল রেঞ্জের-বাঁশতৈল সদর, কুড়িপাড়া, হাটুভাংগা, বংশীনগর, পাথরঘাটাও নলুয়া ফরেস্ট বীটে অবৈধ করাত কলের সংখ্যা-৬৫টি, সখিপুর উপজেলার বহেড়াতৈলী রেঞ্জের আওতায়-বহেড়াতৈলী সদর, কৈয়ামধু, কাকড়াজান (মরিচা), এম.এম. চালা(আন্দি), ও কচুয়া ফরেস্টবীটে অবৈধ করাতকল সংখ্যা-৬৮টি, সখিপুর পৌরসভার মধ্য অবৈধ করাতকল সংখ্যা-২৮টি, হতেয়া রেঞ্জের আওতায়-হতেয়া সদর, বাজাইল, কালীদাস, কড়াইচালা ও কালমেঘা ফরেস্ট বীটে অবৈধ করাতকল সংখ্যা-৩০টি এবং ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায়-ধলাপাড়া সদর, সাগরদিঘি, দেওপাড়া, বটতলী ও ঝড়কা ফরেস্ট বীটে অবৈধ করাতকল সংখ্যা-১২৬টি এবং ঘাটাইল পৌরসভার মধ্য করাতকল সংখ্যা-২৫টি সহ সর্বমোট -৩৪২টি অবৈধ করাতকল গড়ে উঠেছে। এর মধ্য সখিপুর ও ঘটাইল পৌরসভার মধ্য বৈধ করাত কল সংখ্যা ৪৭টি পৌরসভার ভিতরের করাত কল গুলোতেই সন্ধার পর, হতে আশেপাশের ফরেস্ট বীট এলাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে সরকারী ভূমির জমির শাল-গজারী, সেগুন, ও সামাজিক বনায়ন প্লটের গাছ / কাঠ পৌরসভার আওতাভুক্ত করাতকল সমূহ থেকেই ভাংগিয়ে রাতের অন্ধকারেই পাচার করা হয় থাকে বলে জানা যায়।এ ব্যাপারে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কোন প্রকার তদারকি করেন না বলে জানা যায়। স্থানীয় লোকজনেরা জানিয়েছে ঐসব করতকলে দিনরাত শাল-গজারী সহ সামাজিক বনায়নের কাঠ দেদারসে চিড়াই করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনের পাশে করাতকল গড়ে তুলে যেভাবে দিন রাত নির্বিচার গাছ কেঁটে চিড়াই করে পাচার করা হচ্ছে তাতে অল্প দিনেই ঐতিহ্যে ভরা বনাঞ্চল থেকে শাল-গজারী ও সামাজিক বনায়ন বিলিন হয়ে যাবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশের উপরই বর্তাইবে। ঐসব করাতকলে গজারি, সেগুন ও আকাশমনি গাছের অনেক গুড়ি দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি করাতকল মালিকের নাম জানা গেলেও বৈধ কাগজপত্র ও লাইসেন্স না থাকায় কোন করাতকলের প্রকৃত মালিক কে তা কেউ সহজে স্বীকার করতে চায় না। তবে অবৈধ করাতকল মালিকদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সমিতিও রয়েছে। প্রতিটি করাতকল থেকে প্রতিটি ফরেস্ট বীটের অর্থাৎ ফরেস্টবীট কর্মকর্তা প্রতি মাসে ৮/১০ হাজার টাকা করে মাশহারা নিয়ে থাকেন। একেকটি অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ঘনফুট অবৈধ কাঠ চেরাই করা হয়। প্রতি মাসের চার শুক্রবার শুধু বনদ্ধ থাকে। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বন বিভাগ ১/২ টি করাতকলে অভিজান চালিয়ে চলে যায়। এরপর আবার পরবর্তীতে পুনরায় করতকল গুলোতে দেদারছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ চেরানো হয়। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুর, সখিপুুর ও ঘাটাইল উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর প্রায় ৩৪২টির অবৈধ করাতকলে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই চলছে। এছাড়া ওয়াকশনের প্লট সিডিউল ড্রপ করা থেকে শুরু করে বনায়নের প্লট কাঁটা পর্যন্ত বিভিন্ন উপায়ে প্রতিটি বনায়নের প্লটের ব্যাপারি থেকে অবৈধভাবে ১০/১১ হাজার টাকা প্রতি ফরেস্টবীটের কর্মকর্তারা আদায় করে থাকেন বলেও জানা য়ায়। বনায়নের প্লটের অংশিদার নির্ধারিত করার ব্যাপারে ও অংশিদার/পার্টিসিমেন্ট সমিতির সভাপতি বা যে কোন সদস্যের/দালালদের মাধ্যমে বনায়নের প্রতিটি প্লট থেকে ৩০/৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ফরেস্টবীট কর্মকর্তারা নিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।বনায়নের প্লটের ওয়াকশনের টাকা পেতে বনায়নের প্রতিটি প্লটের অংশিদার/পার্টিসিমেন্টদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক প্রাপ্তি টাকার লাখপতি ২/৩ হাজার টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত চেক প্রদান না করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া মূল্যমানের ১০% পরবর্তী চারা লাগানোর খরচ বাবদ মওজুদ রাখা টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে বনায়নের অংশিদার/পার্টিসিমেন্টদের উপর অর্থ ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বছর প্রতিটি ফরেস্ট বীটে থেকে প্রায় কোটি টাকা টাঙ্গাইল বনবিভাগের উর্ধবতন কর্মকর্তা সহ রেঞ্জার ও সংশ্লিষ্ট ফরেস্টবীট কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন বলেও অংশিদার /পার্টিসিমেন্টদের সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়। এছাড়া ঐ সমস্ত অবৈধ করাতকল সমূহ গুলোতে একাধিক করে করাত থাকে। আর সেই করাত দিয়ে রাতের আন্ধকারে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার মহোৎসবে মাতিয়া উঠেন চোরাই পথে কাঠ পাচারকারী চোরেরা। আর এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ফরেস্টবীট কর্মকর্তা/কর্মচারীরা মদদ দিয়ে সরকারী বনাঞ্চলের কাঠ বিক্রি করেন। হতদারিদ্ররা সরকারী বন বিভাগ কর্তৃক সামাজিক বনায়নের অশিংদারিত্রের/পার্টিসিমেন্টদের প্লাট প্রাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও দারিদ্রতার কারনে বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জার এবং ফরেস্টবীট কর্মকর্তাকে প্লাট প্রাপ্তির জন্য ৪০/৫০ হাজার টাকা করে দিতে না পারায় সমাজের বিত্তবান-প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই বেশীর ভাগ প্লট পেয়েছেন বলে জানা যায়। সামাজিক বনায়নের অংশীদারিত্বের/পার্টিসিমেন্টদের প্লটের গাছ ওয়াকশনের মাধ্যমে বিক্রি করার পরপরই দেখা যায় অধিকাংশ জায়গাতেই বাসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ইন্ধনে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর, সখিপুর, কালিহাতি, ও ঘাটাইল উপজেলার সরকারী বন বিভাগ/ বনায়নের জায়গায় সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের উর্ধবতন কর্মকর্তা রেঞ্জার ফরেস্টবীট কর্মকর্তাগন মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ পূর্বক বনায়নের জায়গা দখল ছেড়ে দিচ্ছে। আর সে গুলোর মধ্য শতাশত বৎসতবাড়ি নির্মাণ, পাকাবাড়ি নির্মাণ, বহুতলবিশিস্ট পাকা বিল্ডিং, মৎসপুকুর, বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান, পল্টিফার্ম,দোকানপাট, হাট-বাজার, ও অবৈধ “স”মিলনের গড়ে উঠেছে দেখা যায়।সরকারী বনভূমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জমিগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সরেজমিনে সুস্টভাবে তদন্ত করে (প্রতিটি রেঞ্জের আওতাধীন প্রতিটি ফরেস্ট চিহ্নিত জমি) অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করার এবং এর সাথে আগেও পরে এবং বর্তমানে যে সকল রেঞ্জকর্মকর্তা, ফরেস্টবীট কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগত বিভাগীয় শাস্তিমূল মূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জোরদাবী জানিয়েছেন। ইতি পূর্বে বিভিন্ন পত্রিকায় টাঙ্গাইল বিভাগের জমির মধ্য শতাশত অবৈধ “স”মিল, সরকারী বনভূমির জায়গার দখল ছেড়ে দেয়ার ও সরকারী বনভূমির শাল-গজারী, গজারী, সহ সামাজিক বনায়নের গাছ অবৈধ ভাবে কর্তন করে কাঠ ব্যবসায়ী কাঠ চোরের সাথে যোগ সাজশে বিক্রয় করে রাতের আঁধারে বিক্রয়ের রিপোর্ট পত্রিকা গুলোতে প্রকাশিত হলেও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডি,এফ,ও) টাঙ্গাইল সহ উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেন নি বলেও জানাযায়।সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর ৩৪২ টি করাতকল স্থাপনের পর এক একরের বেশি দু ফসলি ও তিন ফসলি আবাদী জমিতে শতাধিকের বেশি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। বন আইনে আছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১৩ কি.মিটারের মধ্য কোন ইট ভাটা এবং ৫কি.মিটারের মধ্য কোন করাত কল স্থাপন করারা যাবে না। এ আইন কোন ভাবেই মানা হচ্ছে না। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পরিবেশ অধীদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারনে যত্রতত্র বনাঞ্চলের ভিতর অবৈধ করাত কল ও ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। বাঁশতৈল, হতেয়া, বহেড়াতৈলী ও ধলাপাড়া, রেঞ্জের ভিতর ৩৪২ অবৈধ করাত কল স্থাপিত হয়েছে। আর ১০৫টি ইট ভাটা স্থাপিত হয়েছে বহেড়াতৈলী রেঞ্জে, বাঁশতৈল রেঞ্জে ৪৮টি, ধলাপাড়া রেঞ্জে ৫০টি, হতেয়া রেঞ্জে ২টি ইট ভাটা স্থাপিত হয়েছে। ৩৪২টি করাত কল এবং ১০৫টি ইট ভাটা উচ্ছেদ হওয়া প্রযোজন বলে স্থানীয়রা জামান। কাজেই স্থানীয় সচেতন জনগন সরকারী বনাঞ্চল রক্ষার্থে মাননিয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী, বন ও বিভাগীয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষক সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাকে সরোজমিনে তদন্ত করে বনাঞ্চল ধংসকারী টাঙ্গাইল জেলার বন বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দকে প্রত্যক রেঞ্জের রেঞ্জার প্রতিটি ফরেস্টবীটের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।পরবর্তী সংখ্যা হতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকবে।