সুলতান আল একরাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনমানের উন্নয়ন সাধনে “জমি আছে ঘর নেই” প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দশটি ঘর নির্মাণ কাজে ও ঘর বরাদ্দে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, অফিস সহকারী ইসমাইল ও মিন্টু এবং সততা আদিবাসী সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি রাম সরকার এর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শৈলকুপা উপজেলার আদিবাসী সম্প্রদায়। গত বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী সম্প্রদায়দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিড়াদহ আদিবাসী শ্রমজীবি সমবায় সমিতির সদস্য দিলীপ কুমার বিশ্বাস। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে আদিবাসীদের ঘর নির্মাণে দুই লাখ বিশ হাজার টাকা ঘর প্রতি বরাদ্দের পরও প্রত্যেকের নিকট থেকে চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাট হাজার টাকা ঘর বরাদ্দ বাবদ ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসের স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টুর দাবিকৃত টাকা যারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ভাগ্যে ঘর জোটেনি। উপজেলাতে সাতটি আদিবাসী সমিতি সংগঠন থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসের পছন্দমত দুই-তিনটি সমিতির লোকদের টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছয়টি সমিতিকে বাদ রেখে দু’টি পছন্দের সমিতিকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের আদিবাসীদের বসতঘর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি প্রসঙ্গে ছয়টি সমিতির যৌথ স্বাক্ষরে একটি লিখিত দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম গোপনীয়ভাবে সততা আদিবাসী সভাপতি রাম সরকার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসের স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টুর মাধ্যমে প্রত্যেক ঘর নির্মাণে ঘর প্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করে দশটি ঘর দশজন আদিবাসীকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং রাম সরকার এর মাধ্যমে বেনীপুর সরদার পাড়ার কল্পনা-১ ও কল্পনা-২ এর নিকট থেকে আদিবাসীদের প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দুইজনের নিকট থেকে পঁচিশ হাজার এবং আঠার হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয় ও শৈলকুপায় এ যাবত আদিবাসীদের নামে যত টাকা বরাদ্দ এসেছে তা ছাড় পেতে উপজেলা নির্বাহী অফিসকে মোটা অংকের ঘুষ দেওয়া লেগেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন বক্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, অফিস স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টুর অপসারণও দাবি করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অগ্রগতি আদিবাসী বহুমুখী সমবায় সমিতি, কচুয়া মধুদাহ আদিবাসী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি, কুমিড়াদহ আদিবাসী শ্রমজীবি সমবায় সমিতি, হাটফাজিলপুর আদিবাসী মৎসজীবি সমবায় সমিতি ও শৈলকুপা আদিবাসী দারিদ্র বিমোচন সংস্থার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকদ্বয় যথাক্রমে- কমল চন্দ্র দাস, কুমার সরকার, শম্ভু সরদার, গোপাল বিশ্বাস ও দিলীপ বিশ্বাস। উপজেলার ছয়টি আদিবাসী সমিতি ঘর বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং তাদের সমিতি বাদ রেখে দুটি সমিতিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থসহ হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম এর নির্দেশে ঘর বরাদ্দ না পাওয়া ছয়টি সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের অপরিচিত লোকজন দ্বারা তাদেরকে ভয়-ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং তারা উপজেলায় যেতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন। ছয়টি সমিতির এহেন আর কোন উপায় বা মাধ্যম নেই যে যার কাছে গেলে উক্ত বিষয়টি সমাধান হবে এবং আদিবাসীদের উক্ত আত্মসাতের টাকা ফেরৎ পাবে। উক্ত বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ কামনার আবেদন জানিয়েছেন।