নিজস্ব প্রতিবেদক
গার্মেন্টসের শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যাত্রীবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি নৌপথে লঞ্চ চলাচলও শুরু হয়েছে। লঞ্চ ঘাটে মানুষের প্রচন্ড ভিড়। বাংলাবাজার থেকে যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চ, ফেরি আসছে শিমুলিয়া ঘাটে। এ অবস্থায় পুরো মুন্সীগঞ্জ জেলার মানুষ পড়েছে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। এদিকে ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আর ঘাট এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে। জানা যায়, গত শনিবার থেকে গণপরিবহন চালুর ওই ঘোষণা গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কার্যকর হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাস ও লঞ্চ চলাচল করার কথা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। অনেক জায়গাতেই দেখা গেছে বাসে অর্ধেক আসনের জায়গায় পূর্ণসংখ্যক আসনেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই যাত্রীরা চলাচল করছেন। শিমুলিয়া লঞ্চ টার্মিনাল লোকারণ্য, সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন লঞ্চে ওঠা এবং নামার অপেক্ষায়। লঞ্চগুলোও মানছে না নিয়ম। শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে এগুলো। যাত্রীর চাপে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরিতে উঠতে পারছেনা। কোনো কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে একটি লঞ্চকে জরিমানা করা হয়েছে। শিমুলিয়া নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চের মধ্যে মাত্র ১৫টি চালু রয়েছে। কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে লঞ্চ চালকদের বিরুদ্ধে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও কমসংখ্যক লঞ্চ চলাচলের কারণ হিসেবে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল হোসেন খান জানান, সরকারের হঠাৎ লঞ্চ চলাচলের ঘোষণায় চালকেরা আসতে পারেননি। তিনি আরও জানান, গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চালিয়ে তাদের পোষাবে না। তাই অনেক লঞ্চ মালিক এত অল্প সময়ের জন্য লঞ্চ চালাতে সম্মত হননি। গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে দেখা যায়, চন্দ্রেরবাড়ি থেকে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার জুড়ে যাত্রীবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির জটলা। কিছুতেই গাড়ি নড়ছিল না। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সে চাপ কমতে থাকে। যাত্রী শরীফ মিয়া জানান, গার্মেন্টস খোলা তাই গাজীপুর যাচ্ছি। এ ক’দিন বাসায় বসে বসে ধার দেনা করে সংসার চালিয়েছি। কষ্ট হলেও কর্মস্থলে যেতে হবে। তাই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও যেতে হচ্ছে। চাকুরীজীবি তালুকদার জানান, আমি ১ বছর যাবত ঢাকায় একটা কাপড়ের দোকানে ম্যানেজার হিসাবে চাকরি করি। এ বছরের মতো এতো কষ্ট করিনি। পেটের দায়ে কাম করে খাই। লঞ্চে আসলাম প্রতিটি লঞ্চে গাদাগাদি ৫৫ টাকা ভাড়া দিলাম কিন্তু গাদাগাদি করে আসতে হলো। তাহলে কেনো এতো টাকা বেশি ভাড়া দিলাম। বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, এ নৌরুটের বহরে থাকা ১৮টি ফেরির মধ্যে ১০টি চালু রয়েছে। তবে সকাল থেকে ছোট-বড় যানবাহনের চাপ রয়েছে ঘাটে। এদিকে সড়কে গণপরিবহন চালু ও শিমুলিয়া ঘাটের বাসগুলোর চলাচল শুরু হওয়ায় বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে সহজেই যাত্রীরা পাড়ি দিতে পারছে গন্তব্যে। এর ফলে কমেছে যাত্রীদের ভোগান্তি। তবে নদীতে প্রচন্ড স্রোত থাকায় সীমিত পরিসরে চলাচল করছে ফেরি। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক সাফায়েত আহম্মেদ আরো জানান, এ নৌ-রুটে রো রো, কেটাইপ ও মিডিয়ামসহ বর্তমানে ১০টি ফেরী চলাচল করছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য যানবাহন। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।