মাহমুদুল হাসান : শিক্ষা অর্জনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিদ্যালয়ের কোন বিকল্প নেই। সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সে ভূমিকা নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে।
সুপ্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের নারীশিক্ষাসহ যুবসমাজ অনেক পিছিয়ে ছিল। কালের পরিবর্তনের হাওয়া আর সোনার বাংলাকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলকে নিরক্ষর মুক্ত সমাজ ও শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এলাকার বিত্তবানরা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। উপজেলায় পিছিয়ে পড়া নারী জাতি ও যুবসমাজকে শিক্ষার মুখ দেখাতে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন মিরকুটিয়া ইউনিয়নে (সম্ভুদিয়া গ্রামে) সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়টি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলাধীন বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামে নদীর তীরবর্তী অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, দুইটি টিনশেড ঘর, একটি একতলা বিল্ডিংসহ তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ চলমান। এর চারপাশে সবুজ শ্যামলের সমারোহ যা শিক্ষার্থীর মনকে পাঠে মনোযোগী করে তোলে। বিশাল জায়গা জুড়ে খেলার মাঠসহ বিদ্যালয়টিতে সাধারণ শিক্ষায় ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান শাখা, মানবিক ও ব্যবসা শাখা রয়েছে।
সুদক্ষ ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৭শ। অভিভাবক হিসেবে ১২ জন দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যা পূর্বে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ ছিল।
২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১৫৯ জন, পাশ করেছে ১৫৯ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ সহ শতভাগ সাফল্য থাকলেও শিক্ষকরা আরো ভাল ফলাফল দেখতে চান।
১৯৬৯ সালে প্রথম এসএসসি (মেট্রিক) পরীক্ষার্থী যাত্রা শুরুতে ২০ জন শিক্ষার্থী সাফল্যের সাথে শতভাগ পাশ করে। এছাড়াও প্রায় প্রতিবছরই চৌহালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান সবার শীর্ষে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ এবং এ+ সহ পাশের হারেও প্রথম স্থান অধিকার করেছে এ প্রতিষ্ঠান। এ কৃতিত্ব অর্জনের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এ বিদ্যালয়ের অত্যন্ত সুদক্ষ প্রধান শিক্ষিক, চৌহালী উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়াবিদ, ও ন্যায়বিচারক মোঃ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী। শিক্ষার অগ্রদূত ও সাফল্যের ৫৩ বছরের পথচলা সম্ভুদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে সাজানো গোছানো। নদী ভাঙ্গন কবলে পড়লেও সেই ঐতিহ্য আজও বিরাজমান। এলাকায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মেধাসম্পন্ন করে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগী ও প্রতিযোগিতায় ১ থেকে ৫ বা ৭ পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদানের ধারা চলমান রয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, এ বিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে ফলাফল ভাল ও সন্তোষজনক। আমাদের স্কুলে একটি সিডিউল আছে প্রতি বছর প্রত্যেক ক্লাসে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান, শিক্ষা সফরসহ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিনোদন। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় শিক্ষাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্র এ বিদ্যাপীঠ।