স্বপন দেব, মৌলভীবাজার: যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন বা প্রকৃতিতে থাকতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যই মৌলভীবাজারের বড়লেখার হাকালুকি হাওরে বসবে শীতকালীন তাঁবুবাস। ‘হাকালুকি ক্যাম্প’ নামের এ তাঁবুবাস হবে ৩ ও ৪ জানুয়ারি। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাছরাঙা এর আয়োজন করছে। প্রকৃতিপ্রেমী আগ্রহী যে কেউ এতে অংশ নিতে পারবেন। এর জন্য খরচ পড়বে জনপ্রতি ছয় হাজার টাকা। তবে ৪ থেকে ১১ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে খরচ তিন হাজার টাকা। নিবন্ধনের শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর। ৩ জানুয়ারি সকাল থেকে ক্যাম্প শুরু হবে। শেষ হবে ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার আগে। খরচের আওতায় থাকবে (বড়লেখা পর্যন্ত যাতায়াত নিজ দায়িত্বে) সকাল ও বিকেলের নাশতা, দুপর ও রাতের খাবার, সুজানগরের আগর-আতরের কারখানা, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও চা বাগান এবং ক্যাম্প-সংলগ্ন এলাকার হাল গ্রামের পাখিবাড়ি পরিদর্শন। সেই সঙ্গে থাকছে হাওরপাড়ের ধামাইল গীত ও শাহ্ আবদুল করিমের গান নিয়ে বাউল সন্ধ্যা ও বাউল তত্ত্বের আড্ডা। আরও থাকছে নৌকায় বেড়ানো ও মাছ ধরার সুযোগ। আর খাবারের তালিকায় থাকছে স্থানীয় চালের ভাত, হাওরের মাছ, শাক-সবজি, ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠাসহ স্থানীয় লোকজ খাবার। হাকালুকি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এর আয়তন ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গ কিলোমিটার। পাঁচটি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে এটি বিস্তৃত। এর ৪০ শতাংশ বড়লেখা, ৩০ শতাংশ কুলাউড়া, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জ ও ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। এ হাওরের জলরাশির মূল প্রবাহ জুরী ও সোনাই নদী থেকে। এর উত্তর-পশ্চিমে কুশিয়ারা নদী। বর্ষায় এ হাওর প্লাবিত হয়ে বিশাল রূপ ধারণ করে। তখন এর পানির গভীরতা থাকে ২ থেকে ৬ মিটার। ছোট-বড় মিলে এ হাওরে রয়েছে প্রায় ২৩৮টি বিল। এসব বিলে প্রায় সারাবছর পানি থাকে। বিলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের প্রাকৃতিক আবাস। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, এ হাওর ‘মাদার ফিশারি’ নামে অভিহিত। বিরল প্রজাতির অনেক মাছ ও এখানে আছে। এ কারণে এ অঞ্চলে পেশাদার, মৌসুমি বা খোরাকি জেলেদের বসবাস রয়েছে। মাছের পাশাপাশি হাকালুকির বিলগুলোতে নানা প্রজাতির বিরল উদ্ভিদও রয়েছে। গবেষকদের মতে, এ হাওরে ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও ২০ প্রজাতির সরীসৃপের আবাস। অবশ্য মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে অনেক প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত। এ হাওরের কিছু বিলে ধানচাষ ও শুকনা মৌসুমে অনেক বিলে গরু-মহিষ চরানো হয়। এসবের পাশাপাশি এ হাওর আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত পরিযায়ী পাখির জন্য। শীত মৌসুমে এ হাওরে প্রায় ১০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। শুমারি করা জলচর পাখির মধ্যে ৪০৫টি ছিল সৈকত পাখি। এ ছাড়া হুমকির মুখে আছে এমন ছয় প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। এসব পাখির মধ্যে আছে মহাবিপন্ন বেয়ারের ভুতিহাঁস, সংকটাপন্ন পাতি ভুতিহাঁস ও বড় গুটি ঈগল এবং প্রায় সংকটাপন্ন মরচে রং-ভুতিহাঁস, ফুলুরি হাঁস ও কালামাথা কাস্তেচরা। সব মিলিয়ে এ হাওর-বিল প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার।