বাগেরহাট প্রতিনিধি : বৃটিশ শাসনামলে জমিদারি প্রথা শাসন ব্যবস্থার বিলুপ্তি হলেও আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে দেড়’শ বছরের পুরাতন দুটি ভবন জমিদার জিতেন্দ্রনাথ দাসের জমিদার বাড়ী। এ ভবন দুটির একটিতে একসময় ব্যবহার হতো বৈঠকখানা, আরেকটিতে জমিদার নিজেই বসবাস করতেন। বর্তমানে এ ভবনগুলো জরাজীর্ণ, পরিত্যাক্ত। চারিদিক থেকে ভবনের চারুকার্য পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়ে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ভবন দু’টি। ঝুকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন একসময় জমিদারদের দেখভালের বংশপরম্পরা দুটি পরিবার। ইতিহাস এতিহ্য রক্ষার্থে ভবনগুলো সংস্কার ও মেরামত হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন এলাকার অভিজ্ঞ সচেতন মহল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ভূমিকম্পের কারণে একসময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানগুছি নদীর তীরবর্তী সুন্দরবন ঘেঁষা সরালিয়া মৌজা পরবর্তীতে ইংলিশ শাসনামলে রবার্ট মোড়লের নামে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ উপজেলাটির নামকরণ করা হয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলা। ব্যবসার দিক থেকে বড় বন্দর হিসেবে খ্যাত একসময় ছোট কলকাতা হিসেবে পরিচিত ছিল এ বন্দরটি। দেশ-বিদেশের অনেক সওদাগররা এখানে আসতেন বড় বড় ডিঙ্গা ও গহনার নৌকা নিয়ে বাণিজ্য করতে। আজ তা শুধুই স্মৃতি। এরকম এ উপজেলার জমিদার জিতেন্দ্রনাথ দাস, বৃটিশ শাসনামলে সুন্দরবন পরগনায় ৮ হাজার বিঘার তল্লাটে জমির মালিক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী, সন্তান তাকে একা রেখে চলে গেছেন। সেখানে তিনি একা থেকেই তার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশুনা করতেন। ৯২ বছর বয়সে জমিদার জিতেন্দ্র নাথ দাস ১৯৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জীবিত থাকাকালীন স্বাধীনতার পরপরই তার অনেক জমি হাতছাড়া বেদখল হয়ে যায়। সরকারের তত্ত্বাবধানে খাস হয়ে যায় অধিকাংশ জমি। একপর্যায়ে তার ছোট বোনের ছেলে ভাগ্নে বিমান কুমার রায়কে ১৯৮৯ সালে ২২ একর জমি উইল করে দেন। এছাড়াও তার মূল ২য় তলা বাসভবন দুটির ২৫ শতক জমি ভাগ্নের নামে দান করে যান। বর্তমানে এ জমি নিয়ে বাগেরহাট জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র দায়রা জজ ট্রাইব্যুনাল আদালতে ২০১২ সাল থেকে মামলা চলমান রয়েছে। জমিদার বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাড়ির মালিক জিতেন বাবুর ভাগ্নে বিমান কুমার রায় জানান, ১৯৭৪ সালে মামা জমিদার জিতেন্দ্র নাথ দাস কাচারি ঘরটি এখনকার কৃষি ভবন ২৫০ টাকা মাসিক ভাড়া পরবর্তীতে ৪শ টাকা ভাড়ায় চুক্তিতে ব্যাংকের নিকট ভবনটি ভাড়া দেয়। সেখান থেকে তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার কাগজপত্র তৈরী করে জমি ভিপি দেখিয়ে সরকারের তত্ত্বাবধানে মামলা দায়ের করে জোরপূর্বক দখল করে রয়েছেন। এছাড়াও জমিদার জিতেন বাবুর বেদখল হওয়া জমি বর্তমান সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ভবন, হোস্টেল রুমের জায়গা, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। বেদখলকৃত জমি অবমুক্তকরণসহ নিজেদের দখলের জন্য আদালতে দায়েরকৃত মামলা চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মিলন কুমার লস্কর বলেন, কৃষিব্যাংকের ভবনটি তাদের নিজ সম্পত্তি। ০.০৮৭৪ শতক জমিতে ১৯৭৬ সালে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ১৬ হাজার। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত হওয়ায় ব্যাংকিং কার্যক্রম সদ্য মূল ভবন থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম তারেক সুলতান বলেন, এ উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য কুঠিবাড়ী ভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবনের সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এমনকি এ ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।