নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া মেঘনা নদীর নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে চার বছর পর পুনরায় চালু হলো হলো ফেরি সার্ভিস। গতকাল বুধবার দুপুরে গজারিয়ার কাজিপুরা ফেরিঘাট এলাকায় এক আনন্দঘন পরিবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। পরে কাজিপুরা ফেরিঘাট থেকে চারটি গাড়িসহ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় প্রথম ফেরি। এটি ২০ মিনিটে উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ অংশের চরকিশোরগঞ্জ ঘাটে পৌঁছায়। এ ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে গজারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে আসা-যাওয়ায় নদীপথে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে আসবে আর পদ্মা সেতু থেকে মুন্সীগঞ্জ হয়ে সহজেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে তিনটি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হলেও ভবিষ্যতে সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (প্রশাসন) মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে এ নৌ রুটে তিনটি ফেরি থাকছে। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলে চাহিদা মাফিক ভবিষ্যতে এ নৌরুটে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। অন্য রুটে যে হারে ভাড়া নির্ধারিত সে হারেই এখানে ভাড়া নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটের ফেরিগুলো স্থানান্তরের মাধ্যমে অন্য রুটে চালু করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া রুটে আবার ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ ফেরি সার্ভিসটি নিয়ে আমরা আশাবাদী, দক্ষিণবঙ্গ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে আসা যানবাহন ঢাকা শহরে না ঢুকে তারা মুন্সীগঞ্জ হয়ে ফেরি পাড়ি দিয়ে ভবেরচর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারবে। এসব যানবাহনের ক্ষেত্রে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এতে আর্থিকভাবেও লাভবান হবে তারা। শুধু তাই নয়, কৃষিপণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রেও সময় বাঁচবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মধ্যে এই রুটে ফেরির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাক ৭০০ টাকা, মিনিট্রাক ৪৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৩৫০ টাকা, মাইক্রোবাস ৪২০ টাকা, জিপগাড়ি ৪০০ টাকা, বড় বাস ১২০০ টাকা, মিনিবাস ৮১০ টাকা, মোটরসাইকেল ৬০ টাকা ও যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের জুনে এ নৌরুটে ফেরি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দুইপাড়ের যাতায়াতের সড়কের বেহাল দশা, যানবাহন সংকটসহ নানা কারণে কয়েকমাস না যেতেই বন্ধ হয়ে যায় ফেরি সার্ভিসটি। এরপর সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল ঘাটের পল্টুন।
এদিকে, নদীর দুইপাড়ের ভবেরচর-গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সড়ক ২০১৯ সালে সংস্কার শুরু হয়, যা এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এ রুটে বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, অটো, মিশুক, মোটরসাইকেল, ছোট ট্রাক চলাচল করে।
পুনরায় ফেরি চলাচলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিসির যুগ্ন সচিব মো. রাশেদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোঃ মহাসীন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নেকী খোকন। অন্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ এর সম্পাদক মোহাম্মদ আরফিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা আক্তার আঁখি, জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান খানসহ গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ।