নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের পাশাপাশি বাংলাদেশও করোনা ভাইরাস মহামারী থেকে রক্ষা পায়নি। বাংলাদেশে দিন দিন ব্যাপক হারে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে ৮০ শতাংশ গ্রামীণ ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা তাদের চলমান ব্যবসা বা উদ্যোগ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া নানা সংকট মোকাবেলা করে বাকি ২০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা পরিচালনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাই দেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসা বন্ধ করে অন্য উপায়ে রুটি রোজগারে চলে যাচ্ছে, অনেকে অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, সেই সংখ্যায় নারীদের কর্মক্ষেত্রে বিচরণ প্রায় মোট জনসংখ্যার ১০% থেকে ১৫% শতাংশের বেশি নয়। নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নারীরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের উদ্যোক্তা হিসাবে বিভিন্ন ধরনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে। তার মধ্যে অন্যতম হস্ত বা কুটির শিল্প, বিউটি পার্লার ব্যবসা, মেয়েদের ও শিশুদের পোশাক প্রস্তুত, যেমন বুটিক, এপ্লিক, কাটওয়ার, কারচুপি, নকশি কাঁথা, কারুকাজ সম্বলিত পিলো কভারসহ বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের শিল্পের সাথে মেয়েরা একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ বেকার মহিলাদের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে স্বামীদের পাশাপাশি মেয়েরাও পরিবারে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ বিভিন্নভাবে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে আজ স্বল্প ও ক্ষুদ্র মহিলা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বন্ধ, আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সরকারি সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে ব্যবসা চালু করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশের প্রায় এক কোটি মহিলা কোন না কোনভাবে এই কাজের সাথে জড়িত আছে। তারাও আজ বেকার, অসহায়, খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে।
দেশে মহামারীর এই ক্রান্তিকালে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ, নাসিব মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি জনাব মোহাম্মদ আরফিন বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে সারাবিশ্বের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও পুঁজিহারা হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারাও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং একটি স্বল্প উন্নয়নশীল অর্থনীতির আমাদের এই দেশের স্বল্প পুঁজির এই উদ্যোক্তারা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ব্যাপকভাবে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেছি এই জন্য যে, আমাদের সমাজে নারীরা এখনো পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে এখনো নিজেদের অবস্থান করে নিতে পারেনি নানান সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। যদিও বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। সুতরাং বর্তমান এই পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের এই ক্ষতিকে পুষিয়ে তুলে একে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকরী উদ্যোগ যা সরকারী আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি নানান প্রকল্প ভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে। বেসরকারি খাতে এসএমই উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় সংগঠন নাসিব এর পক্ষ থেকে আমরাও এই ক্রান্তিকালে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করার জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দেশের প্রতিটি জেলাতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত আর্থিক প্রণোদনা ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নাসিব জেলা সভাপতিরা কাজ করছে। আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলাতেও আমরা এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছি। পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি পণ্য উৎপাদন, পণ্য বিপণন ও বাজার সংযোগে আমরা এমএসএমইদের নিয়ে বিভিন্ন আন্তঃবাজার সংযোগের পরিকল্পনা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারী-বেসরকারি এসব বাস্তবধর্মী কর্মসূচীর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমএসএমই খাতের এই দুর্যোগ মোকাবেলা করে পূর্বের কাক্সিক্ষত অবস্থানে ফিরিয়ে আসা সম্ভব।
এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর নারী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি একজন নারী উদ্যোক্তা অ্যাড. সোহানা তাহমিনা বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় লক্ষাধিক মহিলা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এই ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িত আছে। কাজ হারিয়ে তারাও আজ বেকার। চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এই সকল ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা বাঁচিয়ে রাখা অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আমি মনে করি, এই সকল ক্ষুদ্র ও স্বল্প উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনার আওতায় এনে তাদের জন্য ন্যূনতম সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করা। যাতে করে মুখ থুবড়ে পড়া এই সকল ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা আবার দাঁড়াতে পারে। নারীর ক্ষমতায়ন সুনির্দিষ্ট করার লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।