মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবক ও শিশু শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে করোনায় থমকে আছে শিশুদের জ্ঞানের রাজ্য। ‘এসো জ্ঞানের রাজ্যে’ শিশুদের উদ্দেশ্যে মুন্সীগঞ্জে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে লেখা রয়েছে জ্ঞান তাপসের ওই বাক্যটি। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ঢুকতেই চোখে পড়ে ওই লেখাগুলো। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো যেন নিরবে দাঁড়িয়ে শিশুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এসো জ্ঞানের রাজ্যে। আমরা তোমাদের জ্ঞানদানে প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু এ ডাক কেউ শোনে না! আর শুনবেইবা কেন..? করোনায় কান স্তব্ধ করে দিয়েছে। করোনার পূর্বে ওই জ্ঞানের রাজ্যে শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠতো বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। সকাল ৯টা বাজার সাথে সাথেই ছোটমনিরা স্কুল ব্যাগ কাঁধে-পিঠে ঝুলিয়ে মা-বাবার সাথে ছুটে যেতো জ্ঞানের রাজ্যে। সেখানে গিয়ে খেলার সাথীদের সঙ্গে খেলাধূলায় মেতে উঠতো। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় সরব থাকতো পুরো এলাকা। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে নানান কারুকার্য ও আল্পনা। বারান্দার টবে সাজানো রয়েছে প্রাকৃতিক ফুলের বাগানসহ জীব-জানোয়ারের প্রতিকৃতি। শিশুরা যাতে বাংলায় ও ইংরেজিতে বারো মাসের ও ৭ দিনের নাম শিখতে পারে কাগজের বিভিন্ন আল্পনার মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালগুলোতে। রয়েছে জাতির পিতার প্রতিকৃতি। অংক শিখানোর জন্য রয়েছে অনেক উপকরণ। বড় বড় মনীষীদের ছবি নামসহ দেয়ালে টানানো রয়েছে। লেখা হয়েছে বিভিন্ন উক্তি যেমন, “শিখবে শিশু হেসে খেলে, শাস্তিমুক্ত পরিবেশ পেলে’’। “যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি ততো উন্নত”। “সকল শিক্ষার ভিত্তিই প্রাথমিক শিক্ষা”। এতে করে শিশুরা বিনোদনের সাথে জানতে ও শিখতে পারছে অনেক জানা-অজানা তথ্য। আর এই আনন্দের মাঝেই তারা পড়ালেখা শিখছে। সবকিছুই যেনো থমকে দিয়েছে করোনায়। গত মার্চ মাস থেকে অদ্যবধি শিশুদের ওই জ্ঞানের রাজ্য শিক্ষার্থী শূণ্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে নিরবে ডাকছে এসো আমাদের রাজ্যে, এসো তোমাদের কোন ভয় নেই। আমরা আছি তোমাদের পাশে। এক শিশুর অভিভাবক পপি বলেন, ‘আমার পোলাডারে (ছেলে) লইয়া বড় কষ্টে আছি রাইত পোহাইলেই (শেষে) কয় বাবা বই দাও, ব্যাগ দাও আমি স্কুলে যামু। স্কুলে যাইয়া খেলমু। তখন বাবা বলে, স্কুলে যাওয়া লাগবে না ওইহানে করোনা আছে।’ এভাবইে তার মতো অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ঘরে আটকিয়ে রাখছেন। অভিভাবক আশরাফ বলেন, তার মেয়ে মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। ওর লেখাপড়া নিয়া আমি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় আছি। স্কুল যে কবে খুলবে কেউই বলতে পারে না। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে মেয়েটি পড়ার টেবিলে মোটেই বসতে চায় না। এরকম স্কুল বন্ধ থাকলে লেখাপড়া করানো সম্ভব হবে না। মুন্সীগঞ্জ সদরের যোগিনীঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, শিশুদের লেখাপড়ার জন্য প্রতি শিক্ষক ৫ জন করে শিশুদের সাথে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ১১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসিমা খানম বলেন, এসময় শিশুদের পড়াশোনার ব্যাপারে আমরা বিকল্প পথ অনুসরণ করছি। যেমন- অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। মোবাইলের মাধ্যমে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিচ্ছি। আমরা প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি পড়াশোনার বিষয়ে। শিক্ষার্থীরাও আমাদের কথামতো বসায় পড়াশোনা করছে বলে জানতে পেরেছি অভিভাবকদের মাধ্যমে। সরকারি নির্দেশনা মেনে সবকিছু করা হচ্ছে।