মোঃ আব্দুল কুদ্দুস,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
মাস খানেক আগে কুষ্টিয়ায় খাজানগর মোকামে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর ফের সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চিকন চাল কেজিতে ১ টাকা ও মোটা সব ধরনের চালে কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। আমন মৌসুম চলাকালিন সময় এ নিয়ে দুই দফা দাম বাড়লো মিল মালিকরা। মিল গেটে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে নিন্ম মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের মাসে চালের খরচ কিছুটা বাড়ালো। চালের দাম বাড়ালেও বাজার মনিটরিং করতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
খাজানগর মোকামের একাধিক মিল মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার কারনে মাস খানেক আগে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের বাজার কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছিল। ধানের বাজার বাড়ায় নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে তা খুবই সামান্য মিনিকেট চাল কেজিতে ১ টাকা ও মোটা সব ধরনের চাল কেজিতে ২ টাকা পর্যন্ত মিল গেটে দাম বেড়েছে। ধানের বাজার বাড়লে চালের বাজার সমন্বয় করতেই এ দাম বাড়ানো হয় বলে জানান তারা।
লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধানের বাজার প্রতি মনে ৫০ টাকা বেড়েছে। সেই কারনে চালের দাম মিল গেটে বেড়েছে। তিনি বলেন, সরুজাতের মিনিকেট চাল ২৫ কেজির প্রতি বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৩০ টাকা। সেই হিসেবে ৫০ কেজির বস্তার দাম হচ্ছে ২ হাজার ২৬০ টাকা। প্রতি কেজির চালের দাম পড়ছেন ৪৫.২০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। কোথাও আরও বেশি। এছাড়া কাজললতা ৩৬ টাকা, আঠাশ ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা ও মোটা জাতের স্বর্ণা ২৭ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে দাম বেড়ে।
মিয়া ভাই রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, বাসমতি, মিনিকেট, কাজললতা ও স্বর্ণা ধানের দাম প্রতি মণে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। সেই কারনে চালের বাজার সমন্বয় করা হয়েছে। কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা বেড়েছে চালের বাজার।
মঙ্গলবার খাজানগর মোকামে মিনিকেট চাল মিল গেটে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৩.৫০ টাকায়।একই ভাবে কাজললতা ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা, আঠাশ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা ও স্বর্ণা ২৪ থেকে বেড়ে বর্তমানে ২৭ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
এক মাস আগে আমন মৌসুম চলাকালেও এক দফা চালের বাজার বেড়ে যায়। সে সময় এখনকার বাজার থেকে চালের বাজার আরো কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কম ছিল।
এদিকে খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ালেও মনিটরিং টিমকে এখন পর্যন্ত কোন মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার করা হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এদিকে মোটা চালের দাম বাড়ায় সাধারন খেটে মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। চালের বাজারে তাদের অতিরিক্ত অর্থ খসবে। সামনে দাম আরো বাড়লে সেক্ষেত্রে দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
মিল গেটে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। পৌরবাজারসহ সব বাজারে চালের দাম কেজিতে আরও ২ থেকে ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। খাজানগরে দাম বাড়ায় দেশের সব চালের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে অনেক মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীর গোডাউনে বিপুল চাল ও ধান মজুদ আছে। দাম বাড়ার সুযোগে তারাও কম দামে কেনা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাড়তি ফায়দা লুটে নেবে।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, বছরের একটা সময় আসে যখন মিল মালিকরা হুট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন। তারা দু’এক সপ্তাহে ফায়দা লূটে নেন লাখ লাখ টাকা। যার প্রভাব পড়ে সাধারন মানুষের ওপর। এবারো বারে বারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে তারা চাল তৈরি করে রাখে অনেক মিল মালিক। সুযোগ বুঝে বেশি দামে ছেড়ে দেয়। কড়া ভাবে মনিটরিং করতে হবে। তাহলে হুট করে বাজার বাড়বে না।
জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন বলেন, অযৌক্তিক কারনে চালের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসন থেকে কঠোর ভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়ে থাকে। ধানের দাম বাড়ার অযুহাতে যদি কোন মিল মালিক অতিরিক্ত লাভ করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।