রংপুর প্রতিনিধি
রংপুর অঞ্চলের আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে। গ্রানুলাসহ আরও তিন জাতের আলু বিদেশে যাওয়ায় আলুর দাম নিয়ে এই দুঃসময়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর অঞ্চলে আলুর আবাদ হয়েছে ৯৭ হাজার হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৮ মেট্রিক টনের ওপরে। এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আলু চাষ হচ্ছে রংপুরে। আগাম জাতের এই গ্রানুলা আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানিও শুরু হয়েছে। এরপরও লোকসানের মুখে ওই অঞ্চলের কৃষকেরা। উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠে না আসার শঙ্কায় তারা। কৃষাণী আরমিনা আক্তার আলো জানান, গ্রানুলা জাতের আগাম আলু চাষ করে বিগত বছরগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র সাড়ে চার টাকা কেজি দরে এবার আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি ২৫ শতক জমিতে গড়ে ১৬ হাজার টাকা করে লোকসান গুনছি। এই হিসাবে চলতি মৌসুমে শুধু আগাম আলুতেই প্রায় ১০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে আমাদের। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের সূত্র মতে, এ অঞ্চলে এবার আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। সেই আলু আরও ২০ দিন আগ থেকেই তুলছেন চাষিরা। ঢাকা-চট্টগ্রামের রপ্তানীকারকরাও আলু সংগ্রহ শুরু করেছেন। আলুর কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই বিদেশে আলু রপ্তানিতে কৃষক এবং রপ্তানিকারকদের আশান্বিত করেছে। এরই মধ্যে এ অঞ্চল থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া বিএডিসিও এবছর আলু রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর কিছুদিন পরে আলু উত্তোলন হলে তারা সরাসরি বিদেশে পাঠাবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিএডিসি’র কর্মকর্তা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাসওয়া এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হোসেন জানান, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় গ্রানোলাসহ অন্য কয়েকটি জাতের আলু পাঠাতে শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার মেটিক টন আলু পাঠিয়েছেন। পুরোপুরি আলুর মৌসুম শুরু হলে আরও পাঠানো হবে। তিনি জানান, রংপুর হতে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যবসায়ী মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় এই তিনদেশে আলু পাঠাতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যবসায়ী গড়ে এক হাজার মেটিক টন করে আলু পাঠাবে। মৌসুম শুরু হলে আরও আলু পাঠানো হবে। এসব আলু দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশি চিপস কোম্পানীগুলো রপ্তানিকৃত আলু কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। রংপুর ছাড়াও চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আলু রপ্তানি করে আসছেন। চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন আলু রপ্তানি করা গেলে এবছর কয়েক’শ কোটি টাকা বৈদেশিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে। সূত্র মতে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত আলাপের পর রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলা থেকে আলু ক্রয় করে প্যাকেটে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তা পাঠানো হয়ে থাকে। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা সারোয়ার টিটু বলেন, ধানের পরই আলুর আবাদ হচ্ছে রংপুরে। ৯৫টি হিমাগার রয়েছে বিভাগে। এরপরও জায়গা সংকুলান হয় না। এজন্য আলু উৎপাদন নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে তাদের ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। এছাড়া বিদেশে রপ্তানির জন্য দ্রুত পরীক্ষণ ল্যাবও দরকার বলে মনে করেন তিনি। কারণ গুণগত মান ঠিক থাকলে বিদেশে আরও বেশি আলু রপ্তানি হবে। দাম পাবেন চাষিরাও। রংপুর বিএডিসি উপ-পরিচালক (আলু) আব্দুল হাই জানান, রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও জয়পুরহাট জেলা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বিদেশে গ্রানোলা, বারি-৭, ইউবিটা জাতীয় আলু রপ্তানি করতে শুরু করেছেন। বিএডিসি এবার মালয়েশিয়ায় আলু পাঠাচ্ছে। এলক্ষ্যে অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, গত বছর বিএডিসি বিদেশে আলু পাঠিয়েছিল। আলুর মান ভাল থাকায় এবারও বিদেশের বাজারে রংপুরের আলুর চাহিদা রয়েছে। রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল হক জানান ‘ইমপোর্ট এক্সপোর্ট আমাদের এখানে না থাকায় বিদেশে কী পরিমাণ আলু রপ্তানি হবে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই, আছে কেন্দ্রের কাছে। তবে আলু সংরক্ষণ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা মাচাং পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের জন্য কাজ করছি। তিনি জানান, সংরক্ষণের জন্য হাতে নেয়া একটি প্রকল্প এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। এটি চালু হলে আলু চাষিরা ভরা মৌসুমে মাচাং পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে ভরা মৌসুমে কম দামে আলু বিক্রি করতে হবে না। সময় নিয়ে দাম দেখে কৃষকরা বিক্রি করবেন। তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলের গ্রানুলা আলুর চাহিদা অনেক বেশী। তিন জাতের আলু বিদেশে যাওয়ায় আলুর দাম পাবেন কৃষক। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি লাভবান হবে কৃষক। কৃষিবিভাগ সার্বিকভাবে ওই তিন জাতের আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় বিপণন করতে সহযোগীতা করছে।