মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরা জেলায় অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে কৃষক তাদের পাট নিয়ে পড়েছে বিপাকে। একদিকে ইরি ধান লাগানোর ভরা মৌসুম চলছে। অন্যদিকে পাট পঁচানোর উপযুক্ত পানি না থাকায় কৃষক হিমশিম খাচ্ছে।
জেলার কৃষি কর্মকর্তা জানান, মাগুরা জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমি পাট চাষের আওতাধীন থাকলেও এবার ৩৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর কৃষিজমিতে পাট চাষ হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, পাট চাষের প্রথম থেকে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পাটে তেমন সুবিধা হয়নাই। অন্যদিকে এক ধরনের পোকা পাটের আগা খেয়ে ফলন কমিয়ে দিয়েছে। এতে পাট খুব একটা বড় হয়নি। খরার কারণে উপযুক্ত ফলন কমে যাবে। জেলার কৃষিপণ্যের সিংহভাগ পাট। বড় বিলসহ মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশিরভাগ পাট হয়ে থাকে। তবে মোহাম্মদপুর এলাকায় কিছু হাওর, বিল থাকলেও সেখানেও পানি সংকট দেখা গিয়েছে। সুদূর কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার মাঝখানে অবস্থিত বড় বিল যেখানকার পানি নির্গত হয় নারায়ণখালি খাল দিয়ে। মাগুরার বিখ্যাত চন্দনা নদীতে গিয়ে পড়ে। নারায়ণখালি খালের শেষ ভাগে একটি সুইচ গেট অবস্থিত যেখানে বড় বিলের পানি সময়মত কমানো বা বাড়ানো যায়। এতে করে এলাকার লক্ষ লক্ষ কৃষক জমি চাষে উপকৃত হয়। অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে কৃষকের এখন করুণ অবস্থা।
মাগুরা জেলার কৃষি উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে একটি সমাবেশ আয়োজন করে। সেখানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। আলোচনায় উঠে আসে, ইরি আবাদে ভরা মৌসুমে যেখানে ৩টা পাম্প চালু থাকতো সেক্ষেত্রে ২টা পাম্প নষ্ট হওয়ায় ১টা পাম্প চালু আছে। এতে কৃষকের চাহিদা পূরণে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
কিন্তু প্রতিবছর এ ভরা মৌসুমে নারায়ণখালি খালে উজান থেকে পানি এসে নারায়ণখালি এসে প্রত্যন্ত অঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করতো। এতে করে কৃষক তাদের সুবিধামত পাট পঁচানোর ব্যবস্থা করতো। তাদের ব্যবহারিক পুকুর যেখানে মাছচাষের উপযুক্ত ছিল এখন তারা সেখানে পাট পঁচানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে করে মাছে-ভাতে বাঙালির উপকথাটি বিলীন হতে চলেছে।
এক শ্রেণির গরীব কৃষক মাছের যে উচ্চদাম সেখানে তাদের চাহিদামত মাছ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এরকম আবহাওয়া আরো কিছুদিন চলতে থাকলে একেতো এই ইরি চাষের ভরা মৌসুম অন্যদিকে পাট কাটার হিড়িক। পানির অভাবে নিজেদের ব্যবহারিক পুকুরে মাছ চাষের বদলে পাট পঁচানোর ব্যবস্থায় ব্যস্ত আছে চাষিরা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাটচাষীদের দাবি, যে ২টা পাম্প নষ্ট হয়েছে তা দ্রুত সংস্কার করে নারায়ণখালি খালে পানির ব্যবস্থা করা। সেইসাথে কুষ্টিয়া হতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাতে প্রতি বছরের ন্যায় লক্ষ লক্ষ কৃষক তাদের পাট পঁচানোর ব্যবস্থা করতে পারে।