ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের শিশু ফয়সাল হত্যা মামলার সেই তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বপ্নযোগে লাশ পাওয়ার রহস্য খতিয়ে দেখতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে জননিরাপত্তা বিভাগের আইন অধিশাখার যুগ্মসচিব এসএম ফেরদৌস এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তপূর্বক বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার লিখিত অনুরোধ জানান। জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড-১) বেলাল উদ্দিনের দপ্তরে পাঠানো হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের অভিযোগ প্রতিকার (এৎরবাধহপব জবফৎবংং ঝুংঃবস), সংক্ষেপে জিআরএস সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, গত বুধবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নিহত ফয়সালের পিতা শেখ আব্দুস সাত্তার। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে অভিযোগটির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের আইন অধিশাখায় প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল নিখোঁজ হয় ডুমাইনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল (১০)। এরপর তার পিতা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলে জিডির সূত্র ধরে জাহাঙ্গীর আলম পলাশ ও মুরাদ বিশ্বাস নামে দুজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে একসাথে জিজ্ঞাসাবাদের দুদিন পর ১৫ মে ওই গ্রামের পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেফটি ট্যাংকে পাওয়া যায় ফয়সালের লাশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, তিনি স্বপ্নযোগে ওই লাশের সন্ধান পান। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক(এসআই) বিপুল দে’কে অব্যাহতি দিয়ে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ আলীকে তদন্তভার দেয়া হয়। এ মামলার তদন্তকালে ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলী সন্দিগ্ধ আসামী নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে (বর্তমানে মৃত) গ্রেফতার করেন। তবে তিনি এজাহারভুক্ত আসামী জাহাঙ্গীর আলম পলাশ ও তদন্তপ্রাপ্ত আসামী মুরাদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন এবং সন্দিগ্ধ আসামী নজরুল ইসলাম নজুকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন। পরে নারাজী আবেদন করলে উচ্চ আদালত মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
হত্যাকান্ডের ৯ বছর পর মামলার তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্ত শেষে গত ২০২২ সালের ৩ জুলাই সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মোয়াজ্জেম হোসেন তদন্ত আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে জানান, এজাহারনামীয় আসামী জাহাঙ্গীর আলম পলাশ তার সহযোগী আসামী মুরাদের সহায়তায় ঘটনার দিন ফয়সালকে কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে আসামী মুরাদের চালিত মটরসাইকেলে করে নিয়ে যাবার পর তাহারা আসামী মোঃ তোজাম বিশ্বাসের (আসামী জাহাঙ্গীরের মামা) এর রাইচ মিলে নিয়ে তোজাম বিশ্বাসের সহায়তায় তাকে হত্যা করে। এরপর লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী ডুমাইন পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাইটগার্ড মো. জসিম উদ্দিনের সহায়তায় ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিছনে সেফটি ট্যাংকের ভিতর ফেলে দেয়। কবিতা রানী (৩৫) নামে নামে এক নারী বলেন, তার বাড়ি ওই সেফটি ট্যাংকের পাশেই। লাশ উত্তোলনের দিন খুব সকালে এস আই বিপুলকে প্রথমে একা ওই স্থানে আসতে দেখেন। এরপর পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে তিনি লাশ তুলেন।
নিহতের ভাই নাসিরুদ্দিন বলেন, এ মামলায় ন্যায়বিচার লাভের আশায় তারা এখনো প্রতীক্ষায় রয়েছেন। আসামী তোজাম জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর তার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। তিনি বলেন, ভাইয়ের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করার জন্য তারা শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এ ব্যাপারে ডুমাইন ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম সাংবাদিকদের জানান, ফয়সালের লাশের সন্ধান কিভাবে মিললো সে রহস্যই জানা হলো না। মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল দে লাশটি উদ্ধার করেন। তবে লাশের সন্ধান কিভাবে পেলেন সেকথা জানতে চাইলে এস আই বিপুল জানান, স্বপ্নযোগে এটি জেনেছেন। এটি কোন তদন্তকারী কর্মকর্তার গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হতে পারে না।