নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর প্রতিনিধি : সময় আর প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে কামারদের সব খুশি। মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশী প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কামার শিল্পের চাহিদাও দিন দিন কমছে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলেও কামার পল্লীর শিল্পীরা ভাল নেই। এরপরেও আশায় বুক বেধে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কামার শিল্পীরা।
কাঁচামাল সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আর তৈরী পণ্যের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দিন দিন লোকসান হতে হতে অসহায় হয়ে হতাশায় ভুগছে কামার শিল্পীরা।
যদিও নতুন তৈরী এবং পুরাতন দা-কুড়াল ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা । কিন্তু সংশয় কাটছে না যেন তাদের। বেচাকেনা আগের তুলনায় কমেছে। কোরবানি পশুর মাংস কাঁটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহার হয় চাপাতি, দা, ছুঁরি, বটিসহ কিছু ধারালো জিনিস । ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের পেশায় কিছুটা ব্যস্ততা বাড়লেও ভাল নেই কামার শিল্পীরা।
কয়েকজন কামার শিল্পী বলেন, বর্তমানে কাঁচা লোহা ও উৎপাদনের উপকরণ গুলোর মূল্য বৃদ্ধি,উৎপাদিত পন্যের মূল্য হ্রাস, ইস্পাত নির্মিত মেশিনে তৈরি জিনিসপত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা এবং অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে কামারশালা প্রায় হারাতে বসেছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে, আবার যারা আকঁড়ে ধরে আছে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কামার পল্লীর কামার শিল্পী মানিক চন্দ্র মহন্ত বলেন, আমি যখন এই পেশায় আসি তখন আমার বয়স ১২/১৩বছর। তখন আমাদের দাউদপুরেই প্রায় ৩০/৩৫টি কামার শিল্পীর দোকান ছিলো। বর্তমানে ৭/৮টি দোকান আছে। উপজেলার কামার পল্লীগুলোতে আগের মত আর ব্যস্ততা নেই। যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় পার করছে কামার শিল্পীরা । কামার শিল্পীদের দাবী, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কোরবানী ঈদ উপলক্ষে তেমন কোন কাজ নেই। তারপরও লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা এমন কর্মহীন জীবন আগে কখনোই দেখিনি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলতো ব্যস্ততা। কিন্তু বর্তমান চিত্র একেবারেই উল্টো। একজন ক্রেতা জানান, ছুরি, বটি, দাঁ প্রতি বছর আর কিনতে হয়না। এবার চামড়া ছড়ানোর জন্য কয়েকটা চাকু লাগবে তাই চাকু ক্রয় করতে এসেছি।
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সহায়তা বা সুযোগ সুবিধা পেলে বাপ-দাদার এই মহৎ শিল্প কামারী পেশা ধরে রাখা সম্ভব হতো। তাছাড়া অনেকের মতো আমাদেরকেও এই পেশা একদিন ছাড়তে হতে পারে জানালেন, কামার শিল্পী মানিক চন্দ মহন্ত।