পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
জেলার পানছড়িতে ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকার কয়েন ও কাগজের নোটের ভোগান্তিতে দিশেহারা ক্রেতা-বিক্রেতা। হঠাৎ করেই ভাংতি টাকা একেবারে কমে যাওয়ায় হাট-বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বেচাকেনায় চরম ভোগান্তিতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দোকান থেকে ১৫ টাকার জিনিস কিনে ২০ টাকার নোট দিলে দোকানী ৫ টাকা ফেরৎ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। প্রয়োজন না থাকলেও ৫ টাকার অন্য কোন সামগ্রী নিতে হয় বাধ্য হয়ে। একই অবস্থা রাস্তায় চলা স্থানীয় যাত্রীদের, পান সিগারেটের দোকানে ক্রেতাদের, খাবার হোটেলে ভোক্তাদের সাথে হরহামেশাই কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষদের প্রতিদিন গচ্ছা দিতে দিতে মাস শেষে অর্থ সংকটে দিন কাটাতে হয়।
পানছড়ি বাজারের বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী জয় প্রসাদ দেব জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সিঙ্গারা, সমুচা, পরোটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ টাকার পরোটা একটু বড় করে ১০ টাকায় বিক্রি করলে ক্রেতা সাধারণ মানুষ নানা মন্তব্য করেন। ক্রেতা কমে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে যায়। ৭ টাকায় বিক্রি করতে গেলে ভাংতি টাকার অভাবে পড়তে হয়। বাজারে ১, ২ ও ৫ টাকার কাগজের নোট ও কয়েন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকেও ভাংতি টাকার সহায়তা পাওয়া যায় না। এছাড়াও বছরে দু-একবার ব্যাংক থেকে কয়েন পাওয়া গেলেও ৫ টাকার কয়েন ২০ হাজার, ২ টাকার কয়েন ১০ হাজার ও ১ টাকার কয়েন ৫ হাজার করে আনতে হয়। যা সাধারণ ব্যবসায়ীর পক্ষে আনা সম্ভব হয় না।
কলাবাগানের আব্দুল কাদির জানান, এক টাকা ও দুই টাকার কাগজের নোট কিংবা কয়েন বাজার থেকে একরকম উঠেই গেছে। ১৮ টাকার জিনিস কিনে ২০ টাকার নোট দিলে দোকানী ক্রেতাকে ২ টাকা ফেরৎ না দিয়ে হাতে একটি চকলেট ধরিয়ে দেন। একই অবস্থা এক টাকার নোট ও কয়েনের ক্ষেত্রে। ৯ টাকার স্থলে ১০ টাকা ১৯ টাকার স্থলে ২০ টাকা দোকানীরা রেখে দিচ্ছেন এক টাকা ফেরৎ দেয়ার কোন প্রয়োজনই হয়না। বিনিময়ের এ ব্যবস্থায় ক্রেতাগণ ক্রমাগত ঠকছেন আর বিক্রেতাদের লাভ ঠিকই হচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা হয় কাঁচা বাজারে তরিতরকারী ও শাকসবজি বেচাকেনায়। ১৫ টাকার সবজি ২০ টাকায় কিনতে হয় বাধ্য হয়। কারণ একটাই ৫ টাকা ভাংতি নেই। ৫ টাকা ও ২ টাকার কয়েন ও নোট উধাও হয়ে যাওয়ায় হাট-বাজারসহ সর্বক্ষেত্রে সমান প্রভাব পড়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়ারের মোবাইল রিচার্জ দোকানদার মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় এক বছর যাবৎ ৫ টাকা, ২ টাকা ও ১ টাকার কয়েন ও নোটের জন্য ব্যবসায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। মোবাইল রিচার্জের বিভিন্ন অফারে ১৯ টাকা, ২১ টাকা, ৩৪ টাকা, ৫৪ টাকা এমনই নানা অফার থাকে। গ্রাহক নির্ধারিত প্যাকেজ নেওয়ার পর ভাংতি টাকার জন্য প্রায়ই সমস্যা ও কথা কাটাকাটি হয়।
অটোস্ট্যান্ডে পান সিগারেট বিক্রি করেন মো. হানিফ। তিনি জানান, একজন ক্রেতা একশলা বেনসন সিগারেট নিয়ে ২০ টাকার নোট দিলে তাকে ৪ টাকা ফেরৎ দিতে না পারলে সিগারেট বিক্রি করা যায় না। ফলে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।
একই কথা বললেন মুদি দোকানী সিরাজ মিয়া। তিনি জানান, ক্রেতা চা-পান নিয়ে ২০ টাকার নোট দিলে ৮ টাকা ফেরৎ দেওয়া সম্ভব হয়না। এমন কাস্টমার দিনে শতাধিক হয়। ভাংতির অভাবে বেচা-বিক্রি হয়না। বাজারে এসব ভাংতি টাকার সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংক ও কৃষিব্যাংকের স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, উনারা ভাংতি না পেলে গ্রাহককে কিভাবে দেবেন? সদর শাখা থেকে সংগ্রহ করার জন্য বলেন। সদর সোনালী ব্যাংকে যোগোযোগ করলে ১ টাকা ও ২ টাকার কিছু কয়েন আছে জানালে উনারা ৫ টাকার কয়েন ও কাগজের নোট দুটোর একটিও নাই বলে জানান।
ব্যবসায়ী ও সর্বসাধারণের দাবী, বেচাকেনা ও লেনদেনের সুবিধার্থে বাজারে ১টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার কয়েন ও কাগজের নোটের পর্যবেক্ষণপূর্বক সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।