চাটমোহর, পাবনা সংবাদদাতা : ‘উইঠে দাঁড়াবের পারিন্যা। হাত-পা কাঁপে, অবশ হয়া আসে। শক্তি পাইন্যা। মাথার মধ্যি এত যন্ত্রণা করে,যেন মইরে যাই। আমি বাঁইচপের চাই, এত অল্প বয়েসে মরবের চাইন্যা। দোহাই লাগে আপনারা আমাক বাঁচান।’
এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত গৃহবধু রিতা খাতুন (২৩)। তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক শামীম হোসেনের স্ত্রী। পাঁচ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও সন্তান হয়নি।
দুই বছর আগে স্ত্রী রিতার ব্রেইন টিউমার ধরার পড়ার পর থেকে সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়ে ইতোমধ্যে দেড় লাখ শেষ করেছেন শামীম। এখন অপারেশন করতে প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ টাকা। স্ত্রীকে সুস্থ্য করতে কোথায় পাবেন এত টাকা, এটা ভেবে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। আর মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে একেকটি দিন পার করছেন তার স্ত্রী রীতা।
হতদরিদ্র শামীম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টিনের ঘরে তাদের বসবাস। পাশে একটি ভাঙাচোরা রান্নাঘর। সকালের রান্না, খাওয়া তখনও হয়নি। অসুস্থ স্ত্রী রিতা খাতুনের সাথে তার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলছিলেন শামীম হোসেন। দু’জনের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
আলাপকালে ভ্যানচালক শামীম হোসেন জানান, বছর পাঁচেক আগে বৃষ্টির মধ্যে বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে কপালের উপরিভাগে আঘাত পান তার স্ত্রী রিতা খাতুন। আঘাতের জায়গা ফুলে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসায় কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠেন তিনি। এর ৩-৪ মাস পর রান্না ঘরে ঢোকার সময় পাশেই থাকা গাছের সাথে একই জায়গায় আবারও আঘাত পান রীতা। তারপর থেকে যন্ত্রণা শুরু। এখন কপালের উপরিভাগে ফুলে উঠেছে।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত গেলো প্রায় দুই বছরে পাবনা, রাজশাহী ও ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। সিটি স্ক্যান, এমআরআই সহ বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রীতা খাতুনের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এটা শুধু আঘাত থেকে হয়নি, অনেকদিন ধরেই তিনি আক্রান্ত, কিন্তু কম থাকায় বুঝতে পারেননি। চিকিৎসকরা এখন দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। অপারেশন করতে প্রয়োজন ৩ লাখ টাকা।
শামীম জানান, গত দুই বছর ধরে স্ত্রী রীতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিংস্ব হয়ে গেছেন তিনি। জমিজমা কিছু নেই। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকা মুল্যের একটি ব্যাটারীচালিত অটোভ্যান ছিল সেটি মাত্র ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তারপর ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারীচালিত বোরাক গাড়ি কিনেছিলেন, সেটিও মাত্র ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া এনজিও থেকে ৩০ হাজার ঋণ নিয়েছিলেন। সব টাকা ও উপার্জনের মাধ্যম শেষ করে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শামীম। এখন দিন এনে দিন খাওয়াটাই যেন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে স্ত্রীর চিকিৎসা হয়ে দাঁড়িয়েছে দু:স্বপ্ন। বর্তমানে দিনমজুরী করে কোনোরকমে সংসার ও স্ত্রীর ওষুধ কিনে চলার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শামীম।
শামীম হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অপারেশন করতে তিন লাখ টাকা লাগবে, এত টাকা কোথায় পাবো। আমারতো সব শেষ। সমাজের বিত্তবানরা কিংবা সরকার যদি আমার স্ত্রীর অপারেশনের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে স্ত্রীকে সুস্থ্য করে তুলতে পারতাম।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: সৈকত ইসলাম জানান, বিষয়টি কষ্টদায়ক। পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন। তিনি শামীম হোসেনকে একটি আবেদন দিতে বলেন।
সমাজের বিত্তবান দয়ালু যারা আছেন তাদের একটু সহানুভূতি, ভালবাসা ও সহযোগিতা পেলে সুস্থ্য হয়ে উঠবেন রীতা খাতুন। তিন লাখ টাকার যোগাড় হলেই পূরণ হবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সহযোগিতার হাত বাড়াতে যোগাযোগ করতে পারেন তার স্বামী শামীম হোসেনের সাথে ০১৭৫৯-৪১২৬৩৮ (বিকাশ, পার্সোনাল)।