চলনবিলাঞ্চলের হাট-বাজারে সব ধরণের মুরগির দাম কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা বেড়েছে
চলনবিল প্রতিনিধি
পৌষের মাঝামাঝিতে চলনবিল এলাকায় হাড় কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটতে শুরু করেছে। আর শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে চলনবিলাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা প্রায় নয় শতাধিক মুরগির খামারে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে খামারের মুরগি রক্ষার চেষ্টা করছেন খামারীরা। এদিকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরের পাইকারী বাজারে সব ধরণের মুরগির দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাবে গত একমাসের ব্যবধানে চলনবিলাঞ্চলের সকল হাট-বাজারে খুচরা এবং পাইকারী দরে বিক্রি করা সব ধরণের মুরগির দাম কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তাড়াশ পৌর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী মোল্লা। তিনি আরো জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে বেশিরভাগ মুরগির খামারগুলোতে নতুন করে মুরগির বাচ্চা না উঠানোর কারণে আগামীতে মুরগির দাম আরো বাড়তে পারে। অপরদিকে ঢাকার পাইকারী মুরগি ক্রেতা আমির হোসেন, সাকলাইন শেখ, কাজেম প্রামাণিকসহ একাধিক মুরগির আড়তের পাইকারী ক্রেতা জানান, মাসখানেক পূর্বেও তারা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি ও সোনালী মুরগি কিনেছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে সরাসরি চলনবিল এলাকার মুরগির খামার থেকে। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরের পাইকারী বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় চলনবিল এলাকার মুরগির খামারগুলোতেও খামারীরা পাইকারী দরে মুরগি বিক্রি করতে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের মুরগির পাইকাররা সরাসরি চলনবিলের খামার থেকে মুরগি কিনে নিয়ে যাওয়ার কারণে চলনবিলের সব এলাকাতেই শহরের মুরগির দামের সাথে মিল রেখে বেশি দামে সব ধরণের মুরগি বিক্রি করছেন। জানা গেছে, চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মাঝারী, প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র খামারীদের বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত প্রায় নয় শতাধিক মুরগির খামার রয়েছে। আর এসব খামারে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণে সোনালী, লেয়ার, বয়লার, কক, পাকিস্তানী লেয়ার, টারকি ও দেশী জাতের বেশিরভাগ মুরগি পালন ও পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। অপরদিকে গত তিন থেকে চারদিনে চলনবিলাঞ্চলে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যে সকল খামারীর খামার খোলা জায়গায় করা আছে তাদের মুরগির খামারগুলোতে রাত এবং সকালের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া খোলা মাঠের মুরগির খামারগুলোতে হিম শীতল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাড়াশের পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার খামারী মো. শামীম হোসেন জানান, এ এলাকায় বর্তমান সময়ে দিনের শেষ ভাগে ১৭ থেকে ১৯ ডিগ্রী ও রাতে ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রী তাপ মাত্রা বিরাজ করছে। আর এ কারণে খামারের মুরগি বাঁচাতে ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী কৃত্রিম তাপমাত্রা রাখার জন্য মুরগির শেডে বা ঘরে ব্রুডার পদ্ধতি হিসেবে বেশিরভাগ খামারে বৈদ্যুতিক বাল্ব, হিটার, হারিকেন বাতি ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে তাপ বাড়িয়ে রাখা চেষ্টা করছেন খামারীরা। আবার শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মুরগির খামারগুলোতে পালন করা মুরগিগুলো আমাশয়, গামবোরু, রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, নেক্রোটিক, এন্টারাইাটস, ব্রুডার নিউমোনিয়া ও রিও ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে চলনবিলের খামারীদের শীত মৌসুমে খামারের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক উচ্চ মাত্রার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি চালু রাখতে বর্ধিত বৈদ্যুতিক বিল, মুরগির ঔষধ খরচ ও বাজারে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে মুরগি উৎপাদনে খরচও বেড়ে গেছে। এ কারণে খরচের সাথে সঙ্গতি রেখে খামারীরা মুরগির দাম অনেকটাই বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার বামিহাল এলাকার খামারী মিলন সরকার। তিনি আরো জানিয়েছেন, যেখানে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে চাহিদার বিপরীতে পাইকারী দরেই মুরগির দাম বেড়েছে। সেখানে চলনবিলের হাট-বাজারে খুচরা দরে মুরগির দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর এ কারণে তাড়াশ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভ্যাটরিনারী সার্জন ডা. মো. শরিফুল ইসলাম শীতের এ সময়ে মুরগি খামারের মুরগি সুস্থ রাখার জন্য মুরগিগুলোকে নিয়মিত প্রতিষেধক দেবার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শীতের এ সময়ে মুরগির প্রতি অধিক যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে গত দেড় মাসের ব্যবধানে চলনবিলাঞ্চলের সকল হাট- বাজারে সব ধরণের মুরগির দাম বেড়ে গেছে। বিল পাড়ের চাঁচকৈড়, সলঙ্গা, গুরুদাসপুর, নওগাঁ, গুল্টা, বামিহাল, হান্ডিয়াল, শরত নগর, বোয়ালিয়া, মির্জাপুর, নিমগাছী, বিনসাড়াসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে বয়লার ১২০ টাকার স্থলে পাইকারী বাজারে ১৫০ টাকা ও খুচরা বাজারে ১৮০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালী ২০০ টাকার স্থলে পাইকারী বাজারে ২২০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২৬০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী জাতের মুরগি পাইকারী বাজারে ৩৫০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সলঙ্গা বাজারের মুরগির আড়তদার সোবাহান মন্ডল জানান, চলনবিল এলাকায় সব ধরণের মুরগির দাম কেজিতে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. সোহেল আলম খান বলেন, শীতের তীব্রতা থেকে খামারের মুরগি রক্ষায় খামারীকে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি মুরগিকে নিয়মিত প্রতিষেধক দিতে হবে। মনে রাখতে হবে অধিক শীতে মুরগি রক্ষায় খামারের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা অতীব জরুরী।