আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে লাথি মেরে অপমান করার বিচার না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তার পরিবার। গত সোমবার সকালে আটোয়ারী প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভুক্তভোগী ধামোর ইউনিয়নের বারাগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিম উদ্দিন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় কথা বলতে পারেননি। তবে তার ছেলে শাহ আলম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শোনান।
এসময় তিনি জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিম উদ্দীন রাধানগর ইউনিয়নের ঘোড়াডাঙ্গা গ্রামের জনৈক অলিয়র রহমান বিমাতা ঘরের ছেলে সম্পর্কে ভাতিজা হয়। এই ভাতিজা জোরপূর্বক দুটি দানপত্র দলিল দেখিয়ে রহিম উদ্দীনের ৬ একর জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন। ভাতিজা অলিয়রের চেয়ে চাচা রহিম উদ্দীন ছোট হওয়ায় জমি জায়গা অলিয়র ও তার বাবার ভোগদখলে ছিল। রহিম উদ্দীন সাবালক হওয়ার পর জমি চাইতে গেলে তারা অস্বীকার করে। পরে রহিম উদ্দীন পঞ্চগড় আদালতে ২০০৭ সালে সিভিল মামলা করে এবং ২০১৪ সালে সেই মামলার রায় পান তিনি। রায় পেয়ে জমিতে গেলে ভোগদখলকারী অলিয়র রহমান আমার বাবাকে লাথি মেরে বের করে দিয়েছিল। পরে আমার বাবা উচ্চ আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের বিজয় দিবসের দিন আমার বাবা রহিম উদ্দীন উক্ত বিরোধীয় জমিতে ঘর উত্তোলন করেন। ওই দিন বিকেলে অলিয়র রহমান মৃত্যুবরণ করেন। পরে আমার বাবাসহ আমরা পরিবারের সকলে মিলে জমি ফিরিয়ে পাওয়ার দাবীতে লাশ দাফনে বাধা প্রদান করি। ঠিক সেই মুহুর্তে অলিয়রের বড় ছেলে বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরে আলম আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিম উদ্দীনকে এলোপাথারি লাথি মারা শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। এরপর এই ঘটনায় ওই মুক্তিযোদ্ধা আদালতে মামলা করতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গ্রামের সচেতন সমাজ মামলা না করার অনুরোধ জানান। দীর্ঘদিন ধরে তারা মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন। আর এ কারণেই গণমাধ্যমের আশ্রয় নেন মুক্তিযোদ্ধাসহ তার পরিবার।
এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও জেলার রানিশংকৈল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরে আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই ঘটনা নিয়ে ওই সময়ে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ মীমাংসার জন্য বসেছিলেন। কিন্তু কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জমির সমাধান করা সম্ভব হয়নি। পরে আমার জমিতে অনুপ্রবেশ করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে সেদিনের বৈঠকে কথাটা উঠতো, উঠলে সেটারও বিচার হতো। সেদিন বলেনি আজ তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ক্ষতি করার জন্য এসব করে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই স্ত্রী মোছাঃ সহিদা বেগম ও মোছাঃ খুশিয়া বেগম, মেয়ে মোছাঃ রাজিয়া বেগম ও রাবেয়া বেগম, বৌমা মোছাঃ রানু বেগমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ জেলা ও উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।