রাজশাহী প্রতিনিধি:-রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালী পৌর এলাকার প্রায় আড়াই কিলোমিটার একটি রাস্তা সংষ্কার করা হয়েছিল এক বছর আগে। এটি করতে গিয়ে খরচ হয়েছিল তিন কোটি টাকা। কিন্তু সংষ্কারের পর তিন মাসও টেকেনি রাস্তাটি। ভেঙে-চুরে পিচসহ পাথর উঠে গিয়ে খানা-খন্দকে ভর্তি এখন দেওয়ানপাড়া-শ্যামপুর রাস্তাটি। আর তাতে জনদূর্ভোগ যেমন বেড়েছে চরমে, তেমনি আবারও সংস্কার করতে গেলে অন্তত ব্যয় বেড়ে কমপক্ষে চার কোটি টাকা খরচ করতে হবে এবার। আবার সংস্কার করা হলেও বালু পরিবহণের ড্রাম ট্রাক বন্ধ করা না গেলে পুনরাই একই পরিস্থিতি হবে বলেও শঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তাটি আবারও সংষ্কারের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে অনেকটা দেউলিয়ায় পরিণত হওয়া কাটাখালি পৌরসভার কোনো অর্থ না থাকায় আপাতত এই রাস্তাটি সংস্কারের কোনো সুযোগও নাই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সরকারি কোনো প্রযেক্ট থেকে ছাড়া আগামী-তিন বছরের মধ্যে এই রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উপায় দেখছেন না এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাটি কাটাখালী বাজারের পশ্চিম প্রান্তে দেওয়ানপাড়া মোড়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে নেমে পদ্মা নদীর পাড় শ্যামপুর বালুঘাট পর্যন্ত নেমে গেছে। এ রাস্তার একে বারে শেষ মাথায় শ্যামপুরে রয়েছে একটি বালুর ঘাট। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ঘাটটি লিজ দেওয়া হয়। আর ঘাটের ওপরে বালুমহাল লিজ দেয় কাটাখালি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর টেন্ডারের মাধ্যমে এ ঘাট ও বালুমহাল লিজ দেওয়া হয়। আর গত দুই বছর ধরে লিজ গ্রহণকারী ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন ও তাঁর লোকজন এখান থেকে বালু উত্তোলন করেন। সেই বালু দিনরাত এই রাস্তা দিয়ে ড্রাম ট্রাকসহ বড় বড় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। এতে করে এক বছর আগে তিন কোটি টাকা ব্যয় করে আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কার করা হলেও এখন কোথাও এখন কোন পিচ নেই। কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। তার ওপর দিয়েই চলাচল করছে বালুভর্তি ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহন।
দেওয়ানপাড়া বাজারের দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু রাস্তায় কাদাপানি ও ধুলার কারণে এই মোড়ে অনেক মানুষ আর আসেন না। এমনকি দূরের বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনকে। সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে পরিণত হলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে রাস্তাটি। তখন মোটরসাইকেল কেউ ভয়ে বের করেন না স্থানীয়রা।
জুলফিকার আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, রাস্তাটি দিয়ে দেওয়ানপাড়া, শ্যামপুর, শ্যামপুর বাখরাবাজ, চরপাড়া, বালুঘাটসহ আশপাশের কয়েকটি মহল্লার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। বছরজুড়েই রাস্তাটি কাদাপানিতে তলিয়ে থাকছে। এতে তাঁরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন রাব্বানী জানান, একবছর আগে পৌরসভার সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আব্বাস আলী দু’দফায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বেনামে লাইসেন্স দিয়ে নিজেই রাস্তাটির সংষ্কার কাজ করেছিলেন। কাজও নিম্নমাণের ছিল। কিন্তু যাই হোক, তাই বলে তিন মাসও যাবে না?’ তিন মাস না যেতেই রাস্তাটি বালুর ট্রাকের থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখন যান চলাচল করায় দায়।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘তিন কোটি টাকার রাস্তা সাতদিনের মধ্যেই নষ্ট হতে শুরু করেছিল। তিনমাসের মধ্যে একেবারেই ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে যায়। কাজের এই ঘাপলার জন্য বরখাস্ত হওয়া মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। আবার রাস্তাটি যে বালুর ট্রাকে ক্ষতি হচ্ছে, তাদের নামেও মামলা করা উচিত।
জানতে চাইলে বালুঘাট লিজ গ্রহণকারী ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বালুঘাট লিজ নিয়েছি। বালুর ট্রাক যাতায়াতারে রাস্তা না থাকলে ব্যবসা করব কি করে? তবে রাস্তাটি সংস্কারের সময় নিম্নমাণের কাজ হয়েছিল। এ কারণে দ্রুত ভেঙে গেছে।’