জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান : বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ১ কোটি ১২ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় পৌর এলাকার বিভিন্ন পানির পাম্পের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বান্দরবান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৩ তারিখ থেকে পৌর এলাকার ৭টি পানির পাম্পের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এরপর থেকে পৌর এলাকার ৭টি লাইনে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌর এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
জনস্বাস্থ্য অধিদফতর বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের সহকারী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান।
বান্দরবান বিদ্যুৎ উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন ৭টি পানি সাপ্লাই কেন্দ্রের ১ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ক্যচিং ঘাটা ওয়াটার পাম্প থেকে বকেয়া ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৫, পৌর ওয়াটার সাপ্লাই থেকে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬৮, বালাঘাটা ওয়াটার পাম্প থেকে ৬ লাখ ৫ হাজার, উজানী পাড়া পাম্প থেকে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৩, টেক্সটাইল ভোকেশনাল পাম্প থেকে ৫ লাখ ৭২ হাজার, রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন পাম্প থেকে ৩ লাখ ৩১ হাজার ১০৪ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ভবনের ৪২ হাজার ৮৪১ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য অফিসিয়ালি নোটিশ দেওয়া হলেও জনস্বাস্থ্য অধিদফতর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। তাই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না করা পানি সাপ্লাই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ বান্দরবানের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে ৭টি হিসাব নম্বরের বিপরীতে ১ কোটি ১১ লাখ ৮ হাজার ৩৮০ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। পরিশোধের জন্য বারবার অফিসিয়ালি তাগাদা দিলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। তাই সরকারি রাজস্ব আদায়ের জন্য সাতটি বিদ্যুৎ-সংযোগ বকেয়ার দায়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি এলাকা বান্দরবানে প্রাকৃতিকভাবে পানির উৎস খুবই কম হওয়ায় সাপ্লাই পানির ওপর নির্ভরশীল পৌর এলাকার ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ওয়াটার পাম্প সচল না থাকায় পানি সরবরাহ দিতে পারছে না জনস্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌর এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের এত টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিস্মিত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
বালাঘাটার বাসিন্দা রাসেদ ইসলাম বলেন, আমাদরের লাইনে দীর্ঘদিন ধরে পানি আসছে না। আমার পানির বিলও বকেয়া নেই।
রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পানি আসছে না। বাসায় খাবার পানিও নেই। আমরা এর সমাধান চাই।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ১৮ জানুয়ারি ইস্যুকৃত অগ্রণী ব্যাংকের একটি ৫ লাখ ১ হাজার টাকার চেক প্রদান করলেও তা ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকে উপস্থাপন করলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক চেকটি প্রত্যাখ্যান করে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য্য জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রায় সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে পার্বত্য জেলা পরিষদ বান্দরবান। এ ছাড়া চেকও ইস্যু করেছে জেলা পরিষদ। কেন বা কী কারণে এত টাকা বকেয়া বা চেক প্রত্যাখ্যান হলো, সেটা জেলা পরিষদই ভালো বলতে পারবে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যা শৈ হ্লা জানান, অসুস্থতার কারণে কিছুদিন খোঁজখবর নিতে পারিনি। আজ বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। সাধারণত প্রতিবার সমন্বয় করে এসব সমস্যার সমাধান করা হয়। তবে জনগণকে জিম্মি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর এ ধরনের বকেয়া আদায়ের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও জানান, কেন চেক প্রত্যাখ্যান হলো, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং জনগণ যাতে পানির জন্য কষ্ট না পায়।