মঈন উদ্দীন বাপ্পী, রাঙামাটি সংবাদদাতা : বিদেশী ফল রাম্বুটান কিছুটা লিচুর মতো। আকারে লিচুর চেয়ে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা। ফলটি দামি এবং জনপ্রিয়তা পাওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাম্বুটান বাগান রাঙামাটিতে বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
পাহাড়ের মাটিতে একসময় জুম চাষের আধিক্য থাকলেও বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী কর্মযজ্ঞের কারণে এখানে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকেরা। বর্তমানে পাহাড়ের মাটি কৃষির জন্য ভূ-স্বর্গ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে পুরো দেশে। এখানে যা চাষ করা হয় তা চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপন্ন এবং সুমিষ্ট হয়। তাই সরকারও কৃষির উন্নয়নে পাহাড়ে নিত্যনতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। সরকারের এমন মহাযজ্ঞের কারণে কৃষকরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি এ অঞ্চলের অর্থনীতির খাত সচল হচ্ছে।
কৃষির জন্য ভূ-স্বর্গ খ্যাত পাহাড়ের মাটিতে বিদেশী ফল রাম্বুটান চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন ঢাকা নিবাসী রাঙামাটির সন্তান প্রকৌশলী প্রবীন চাকমা। জেলা সদরের বন্ধুকভাঙ্গা ইউনিয়নের মুবাছড়ি এলাকায় নিজের চার একর পাহাড়ি জমিতে তিন বছর আগে ৩৫০টি রাম্বুটান গাছ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।
এ প্রকৌশলী ভারতের চেন্নাই থেকে ৩৫০টি রাম্বুটানের চারা ক্রয় করে। ভারত থেকে প্রতিটি চারা কেনা হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা করে এবং দেশে আনতে খরচসহ প্রতিটি চারার দাম হয়েছে দুই হাজার ৬০০টাকা। শখের বসে এসব চারা সংগ্রহ করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। এ বাগান থেকে চলতি মওসুমে দুইবার ফলন বিক্রি করে আয় করেছেন তিন লাখ টাকারও বেশি।
কৃষি বিভাগ জানায়, তিন দশক আগে থেকে রাঙামাটির কিয়দংশে বিছিন্নভাবে রাম্বুটানের গাছ থাকলেও এ ফল অনেক মানুষের অজানা। বর্তমান সরকারের কৃষির প্রতি সুনজর থাকায় পাহাড়ে কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছে। যেখানে অনাবাদি জমি সেখানে চাষাবাদ শুরু করা হচ্ছে। চাষে যোগ করা হচ্ছে নতুন নতুন লাভজনক ফসল। রাম্বুটানও দামি ফসলের মধ্যে একটি।
সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রাম্বুটান আকারে লিচুর চেয়ে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা। পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। ফলের পুরু খোসার উপরিভাগ কদম ফুলের মতো শত শত চুল দিয়ে আবৃত।
বর্ষাকালে জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্ট ফলের রঙ সবুজ থাকে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা যুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফল চাষে বেশি উপযোগী।
রাম্বুটান বাগানের কর্মচারী চন্দ্রজিৎ চাকমা বলেন, একসময় তারা আম, কাঁঠাল লিচুসহ অন্যান্য ফলের চাষ করলেও রাম্বুটানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় তারা রাম্বুটান চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অল্প পরিশ্রম এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষীদের মাঝে এ ফল চাষের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।
বন্ধুকভাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিংসুক চাকমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে রাঙামাটিতে রাম্বুটানের চাষ হচ্ছে। ফলনটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এই ফল আকারভেদে কেজি প্রতি এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রাম্বুটান দেশের মানুষের জন্য নতুন একটি ফল। এ ফল চাষের জ্ঞান সাধারণ কৃষকদের মাঝে নেই। উচ্চমূল্যের এ ফলটি চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে।
কৃষিপ্রেমীরা বলছেন, পাহাড়ে উৎপাদিত সুস্বাদু রাম্বুটান চাষ কৃষি অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করবে এবং মানুষের শরীরে নতুন পুষ্টিগুণ দিতে সহায়তা করবে।