মোঃ আব্দুল কুদ্দুস,কুষ্টিয়া প্রতিবেদক:
কুষ্টিয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের ঘোষনা দিলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। প্রায় এক মাস আগে শুরু হওয়া ধান সংগ্রহ চলছে কচ্ছপ গতিতে। কয়েকটি উপজেলায় রাজনৈতিক নেতারা হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারনে নেতাদের পছন্দের লোকজনের নাম তালিকায় তুলে সেই তালিকা থেকে লটারি করার মত অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। গত নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে সরকারি ভাবে ধান সংগ্রহ শুরুর করার নির্দেশনা আসে। জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১০ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন ধান কেনার চিঠি দেয়া হয় জেলা খাদ্য অফিসে। চিঠিতে লটারি করে প্রান্ত্রিক কৃষক বাছাই করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই মোতাবেক কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষি বিভাগ। এরপর ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকদের লটারি করার কথা বলা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একমাত্র সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকদের সামনে লটারি করে। বাকি উপজেলায় উপজেলায় বসে লটারি করেন ইউএনওরা। লটারিতে নাম আসা কৃষকদের কাছ থেকে ১টন করে ধান কেনা হচ্ছে। প্রতিমণ ধানের জন্য কৃষক পাচ্ছেন ১ হাজার ৪০ টাকা। তবে অনেক ক্ষেত্রে লেবার ও পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে ফুড অফিসকে। জেলা খাদ্য অফিস সুত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সদর উপজেলায় কেনা হয়েছে ৩২৪ মেট্রিক টন, কুমারখালীতে কেনা হয়েছে ২৭ মেট্রিক টন, খোকসায় কেনা হয়েছে ২৫ মেট্রিক টন, ভেড়ামারায় কেনা হয়েছে ৭৭ মেট্রিক টন, মিরপুরে কেনা হয়েছে মাত্র ২ মেট্রিক টন ও দৌলতপুরে কেনা হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। ১০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনের মাধ্যে মাত্র ৫৫৫ মেট্রিক টন ধান কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন, কুমারখালীতে ১ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন, দৌলতপুরে ২ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন, মিরপুরে ২ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন, ভেড়ামারায় ৮৬৮ মেট্রিক টন ও খোকসায় ৮২০ মেট্রিক টন। ধান কিনতে দেরি হচেছ কেন জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার বলেন, তালিকা প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে বেশি। তালিকা প্রস্তুত প্রায় শেষ। তাই আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কিনতে পারব বলে আশা করছি। দৌলতপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কৃষকরা ধান নিয়ে আসলেই কেনা হচ্ছে। কেনায় ধীর গতির কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাকে অনেকেই ফোনে নানা কথা বলছে। তবে আমি এসব পাত্তা দিচ্ছি না। কৃষক ছাড়া বাইরের কোন লোকের ধান কেনা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছি। প্রতিদিনই ধান কেনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। একাধিক সুত্র জানিয়েছে, মিরপুর উপজেলায় কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস কৃষি অফিসারদের সাথে নিয়ে লটারি করে তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ধান কেনার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও একজন প্রতিনিধি তাদের পছন্দের লোক ছাড়া ধান কেনা যাবে না বলে হুমকি দিয়েছেন। এরপর থেকে ধান কেনা বন্ধ রয়েছে। নতুন করে কৃষকদের তালিকা করার দাবি জানিয়েছে তারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে নিয়ে জনতা টেড্রাসের মালিক হাফিজুল ইসলাম হাফিজ কৃষকদের নাম ব্যবহার করে ধান দেয়ার চেষ্টা করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জনতা টেড্রার্সের মালিক হাফিজুল ইসলাম হাফিজ নিজের সম্পৃক্তার কথা অস্বীকার বলে বলেন, আমি এবার ওদিকে যায়নি। আমি কোন ধান দিচ্ছি না। শুনেছি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। ধান কেনার গতি একেবারেই কম কেন জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। তবে নানা ব্যবস্তার কারনে ধান কেনার সময় হয়ে উঠছে না। চাপের বিষয়ে বলেন, প্রকত কৃষকদের তালিকা করেছি। যতই চাপ আসুক কোন অনিয়ম হবে না। সরকারের নির্দেশনার বাইরে কোন কাজ কেউ করাতে পারবে না আমাকে দিয়ে। তবে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রকৃত কৃষক ছাড়া এক ছটাক ধানও কেনা হবে না। সব কর্মকর্তাকে সেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুততার সাথে কৃষকদের নিকট থেকে ধান কেনা হবে। ধান ও চাল সমন্বয় করে কেনা হবে প্রয়োজন হলে।