গোলাম হায়দার, বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলীতে সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া উপজেলা চেয়্যারময়ানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক, এমনটা অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকান। গতকাল রবিবার বেলা ১২টায় বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকান বলেন, সম্প্রতি আমাকে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে কতগুলো ভুয়া, মনগড়া, অসত্য ও কাল্পনিক অভিযোগ এনে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন কতিপয় জনপ্রতিনিধি। আমি বলতে চাই, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিরও বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। যদি সত্য হতো তাহলে এই কথিত অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগে ওইসকল জনতিনিধিরা মৌখিকভাবে কিংবা আপনাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে এসবের স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে অন্তত কিছু অভিযোগ তুলতেন। এমনকি তারা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বয়কট অথবা বর্জন করতে পারতেন। কিন্তু এ ধরনের কোনো অভিযোগ ছিল না বলে তারা এটা করার সুযোগ পাননি। এখন হঠাৎ করে মনগড়া কিছু অভিযোগ তুলে তারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। তিনি আরও বলেন, নিশ্চয়ই জানেন যে আমি জনগণের ভোটে স্বতন্ত্র উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের একজন সদস্য। দলের দুর্দিনের একজন নিবেদিত প্রাণকর্মী। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো অসত্যতার কালিমা নেই। এজন্য ২০০১ সালে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া তৎকালীন বরগুনা-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দলীয়ভাবে ওই নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির ব্যাপক অনিয়মের কারণে ভোট বর্জন করার পরও আমতলী-তালতলীর জনগণ আমাকে ৩৮ হাজার ভোট দিয়েছিল। এজন্য আমার সবসময় জনগণের প্রতি আস্থা ছিল এখনও তা অবিচল আছে। অনাস্থা প্রদানকারীরা বিএনপি, জামাতপন্থী ও অনুপ্রবেশকারী দাবী করে গোলাম সারোয়ার ফোরকান আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এই অনাস্থা প্রদানকারী চক্রের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে অবহিত আছেন। এদের মধ্যে ২০০২ সালের ২৪ই মে আমতলী উপজেলা বিএনপি অনুমোদিত কমিটিতে বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান ৪৪নং সদস্য, মজিবর রহমান কোষাধ্যক্ষ, আক্তারুজ্জামান বাদল খান ৪৫ নং সদস্য, মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক, মতিয়ার রহমান ও মজিবর এর বোন ফিরোজা বেগম মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, ভাইগ্না আবুল কালাম আজাদ ২৮নং ক্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তারা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন। দলে অনুপ্রবেশ করেই অন্য অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে মিলে পুরানো ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোনঠাসা করে রাখে, এমনকি উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ এর সভানেত্রী পদে নির্বাচিত করেন মতিয়ার রহমান এর স্ত্রী নুসরাত জাহান লিমুকে। তারা দলীয় নেতৃত্বকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে যথেচ্ছা লুটপাট করে নিজেদের অন্যায় পথকে নির্বিঘ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই এখন তারা একত্র হয়ে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়ার মতো জঘন্য নাটকের আশ্রয় নিয়েছেন। আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকান আরও বলেন, আমতলীতে আওয়ামীলীগের রাজনীতি আজ অনুপ্রবেশকারী, লুটেরা, সুযোগ সন্ধানের করালগ্রাসে। তারা আমতলী উপজেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ভুলুণ্ঠিত করে এক অসুস্থ লুটপাটের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এজন্য সুযোগ সন্ধানী, অনুপ্রবেশকারীরা নানারকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আপনাদের সহযোগিতায় আইনগতভাবে মোকাবেলা করতে চাই। এ ব্যাপারে আমি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। এদিকে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকানের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই দুপুর আড়াইটার দিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থা প্রস্তাবকারীরা। আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব প্রদানকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আমতলীর গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট নুরুল ইসলাম। এডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, গোলাম সারোয়ার ফোরকান আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আইন লঙ্ঘন করে তার ইচ্ছামত খামখেয়ালীভাবে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা পরিষদের কাজ পরিচালনা করছেন। এছাড়া সকলের পক্ষে তিনি ১০ দফা দাবী জানান। এসময় তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন আমতলী সদর ইউপি চেয়্যারম্যান মোতাহার মৃধাসহ আরও কয়েকজন সদস্য।