ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
পরিবহন খরচসহ গুণগত মান যাচাইয়ে জটিলতার কারণে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে অনীহা দেখাচ্ছেন কৃষকেরা। এ কারণে ৭৯ দিনেও লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত এক হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ছয় মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা গেছে। যার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার দশমিক ০৬ মেট্রিক টন। সরকারি মূল্য বাজারের মূল্যের প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আসছেন না। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফুলবাড়ী উপজেলা খাদ্যগুদামে তিন হাজার ৯৪৪ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন চাল এবং এক হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার কথা। গত বছরের ২৪ নভেম্বর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা এবং চাল ৪০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮০ দিনে খাদ্যগুদামে তিনজন কৃষকের কাছ থেকে ৬ মেট্রিক টন ধান কিনতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। ফুলবাড়ী হাটবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে আমন ধান প্রতি কেজি ২৫ টাকা ২৫ পয়সা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার কৃষকেরা অ্যাপের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লটারীর মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকদের মধ্য থেকে ৬৫০ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। মূলত এই ৬৫০ জন কৃষকই খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মো. নাসিম আল আকতার বলেন, এ পর্যন্ত গুদামে চাল সংগ্রহ করা গেছে তিন হাজার ৬৩২ দশমিক ৭৯০ মেট্রিক টন এবং মাত্র তিনজন কৃষকের কাছ থেকে দুই মেট্রিক টন করে ছয় মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা গেছে। উপজেলার পৌর এলাকার আদর্শ কৃষক অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান ও কাঁটাবাড়ী গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষেতের ধান শুকিয়ে নিয়ে গুদামে নিয়ে গেলেও বলা হয় মিটার পাস হয়নি। তখন ধান বাড়ীতে ফেরত আনতে হয়। তাতে বাড়তি পরিবহন খরচ দিতে হয়। তার চেয়ে বাজারে নিয়ে বেচাই ভালো।’ আলাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মহিদুল ইসলাম ও খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী গ্রামের কৃষক রাখাল চৌধুরী বলেন, ‘খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলেই খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এক টন ধান গুদামে ঢুকাতে গেলে খাদ্যগুদামের লেবারদের গুণতে হয় ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। পরিবহণ খরচ যায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তার ওপর আরও বাড়তি কিছু খরচ তো আছেই। গরিব কৃষকের জন্য খাদ্যগুদামের চেয়ে বাজারেই ধান বেচা অনেক ভালো।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ধানের সরকারি দাম বাজারের দামের প্রায় কাছাকাছি। এ কারণে কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে আসছেন না। এ কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তবে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’