ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণ
মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, দিনাজপুর প্রতিনিধি
পার্বতীপুরে খোলা আকাশের নিচে ঈদ করলো কয়েক হাজার পরিবার। গত রোববার রাতের ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিয়েছে তাদের ঈদ আনন্দ। মাত্র ২০ মিনিটের ঝড়ের তান্ডবে চারটি ইউনিয়নের ২০/২৫টি গ্রাম ও বাজার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ধ্বসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। ঝরে পড়েছে গাছের ফলমূল। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের অসংখ্য খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহনাজ মিথুন মুন্নী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান গত সোমবার ঈদের দিন বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে সাতশত পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, সেমাই, চিনি, সাবান ও নগদ টাকা বিতরণ করে। এছাড়া গত বুধবার হাবড়া ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মাহালীপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪২টি পরিবারের মাঝে প্রতি পরিবারে ২ বান (বান্ডিল) ঢেউটিন ও নগদ তিনহাজার টাকা করে মোট ৮২ বান ঢেউটিন এবং ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।
জানা গেছে, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পার্বতীপুর উপজেলার হাবড়া, হামিদপুর, হরিরামপুর ও মোস্তফাপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় ৮নং হাবড়া ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী রামরায়পুর মাহালীপাড়া, শেরপুর তেলিপাড়া, শেরপুর মধ্যপাড়া, পূর্ব শেরপুর শহীদহাট, রামপুরা, ধাপের বাজার, ৯নং হামিদপুর ইউনিয়নের খলিলপুর সরদার পাড়া, সস্তাপুর, হামিদপুর, পাতিগাঁও, পাতড়াপাড়াসহ চারটি ইউনিয়নের ২০/২৫টি গ্রাম ও বাজার। এসব এলাকার হাজার হাজার পাকা, সেমিপাকা, কাঁচা ঘরবাড়ি, দোকানপাট ধ্বসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সস্তাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ে ও ভেঙ্গে যায়। গাছপালা ভেঙে পড়ার কারণে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকে পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী সড়ক। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রাস্তা থেকে গাছ অপসারণের পর সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মেরামত করে প্রায় ৬৬ ঘন্টা পর গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। খলিলপুর সরদারপাড়ার আরিফুজ্জামান (২৩), মজিদুর হক (২৪) সহ চারিটি ইউনিয়নে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেলে সস্তাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাহুল হক সরদার ও ৮৫ বছর বয়সী হাসান আলী মাস্টার বলেন, তাদের জীবদ্দশায় এমন ঝড় দেখেননি। শেরপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন বলেন, তার বাড়ির সবকিছু ভেঙে পড়ে খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। ঈদের রান্না করতে পারেনি তিনিসহ গোটা গ্রামের মানুষ। তেলীপাড়া গ্রামের মৌসুমী বেগম বলেন, তার স্বামী মজিদুল রিকশা ভ্যান চালায়। করোনার কারণে আয় রোজগার নেই, তার ওপর এই ঝড় তাদের পথে বসিয়েছে।
হামিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম ও হাবড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই লোকজন চরম আর্থিক সংকটে আছে। তার উপর পরপর দুটি ঝড় (আম্ফান, ঘূর্ণিঝড়) বয়ে যাওয়ায় লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চুড়ান্ত তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।
পার্বতীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আব্দুল আলীম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। গোটা উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি, তবে ১২ হেক্টর বাগানের আম ঝরে গেছে ও ১০ হেক্টর ভুট্টা ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহনাজ মিথুন মুন্নী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তান্ডবে প্রাথমিকভাবে উপজেলার ৮ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যথাসাধ্য সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ও হবে।