মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ‘লিভিংস্টোন বাংলাদেশ’ নামে আস্ত একটি বিদ্যালয় বিক্রি হতে যাচ্ছে। নজিরবিহীন এই অনৈতিক অপকর্মটি করছেন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক জনৈক বিমল রায়। বিদ্যালয়টির ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি সেজে বিমল রায় যোগসাজশ করে ইতিমধ্যে বিক্রির বায়নানামা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন জনৈক কামরুল হুদা বাদশার নামে। ২৯ আগস্টের মধ্যে প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিদ্যালয়টি বিক্রি ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে বিদ্যালয়টির সম্পত্তি, স্থাপনা ও অবকাঠামো রক্ষার জন্য মন্মথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে গত ১৯ আগস্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। জানা গেছে, পার্বতীপুর শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের সন্নিকটে ২নং মন্মথপুর ইউনিয়নের রাজাবাসর মৌজায় সিএস খতিয়ান নং ৩২, এসএ খতিয়ান নং ৪৩, খারিজ খতিয়ান নং ১৭৩৭, ডিপি খতিয়ান নং ২০৮, হালদাগ নং ২৯০৩ পরিমাণ ৪৫ শতক জমির উপর লিভিং স্টোন বাংলাদেশ স্কুলটি অবস্থিত। ২০১১ সালে বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লিভিং স্টোন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরিয়ম সরেন এর নামে জমি ক্রয় করে অত্যাধুনিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। সেসময় বিমল রায় লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালক বিমল রায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজ খেয়াল খুশি মত স্বুল পরিচালনা ও অর্থ ব্যয় করতে থাকায় একসময় বিদেশী দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ সুযোগে বিমল রায় ব্যক্তিগত লাভের আশায় কারো সাথে কোন পরামর্শ না করে গত বছর নভেম্বরে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হতো বিদ্যালয়টিতে। হঠাৎ করে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই বিপাকে পড়ে যান। করোনাকালীন ব্যস্ততার সুযোগে তৎকালীন পার্বতীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামানকে ভুল বুঝিয়ে গত ১১ জুন বিমল রায় লিভিং স্টোন স্কুলের সভাপতি সেজে নিজ নামে স্কুলের জমি খারিজ (নামজারি) করে নেয়। এরপর গত ২৯ জুলাই জনৈক কামরুল হুদা বাদশার নিকট স্কুলটি (স্থাপনা, অবকাঠামোসহ (৪৫ শতক জমি) বিক্রি করার জন্য বায়নানামা রেজিস্ট্রি করে দেয়। লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুলের একশ গজের মধ্যে বিদেশী মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত ১১৫ শয্যার অত্যাধুনিক ল্যাম্ব হাসপাতাল রয়েছে। ল্যাম্ব হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ও লেভেল ইংলিশ মিডিয়াম একটি স্কুল রয়েছে। ২০১১ সালে লিভিংস্টোন বাংলাদেশ স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরিয়ম সরেন এর পরিবারের দু’জন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত রোববার জানান, বিমল রায় একসময় ল্যাম্ব হাসপাতাল কম্পাউন্ডে স্থাপিত ‘ও লেভেল’ স্কুলের শিক্ষক ছিল। ল্যাম্ব হাসপাতালে বিদেশীদের আনাগোনা সবসময় ছিল। বিভিন্ন দাতা সংস্থার লোকজনও আসতো। বিমল রায়ের সাথে কয়েকটি বিদেশী দাতা সংস্থার লোকজনের গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে চাতুরতার সাথে স্কুলের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সেইসব বিদেশী ডোনারদের সাথে যোগাযোগ করে স্কুল প্রতিষ্ঠায় অর্থ সাহায্য দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। সে সময় স্কুল প্রতিষ্ঠায় মরিয়ম সরেনের পরিবার সার্বিক সহযোগিতা করেন। যেহেতু এটা বিদেশী অর্থে ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত, সেহেতু কোন ব্যক্তি তা বিক্রি করে দিতে পারে। এটা অনৈতিক বলে ল্যাম্ব হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান। মন্মথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগর আলী জানান, বিদেশী অর্থে লিভিং স্টোন স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত, কারো ব্যক্তিগত অর্থে নয়। বিমল রায় কথিত সভাপতি সেজে তা বিক্রি করে দিতে পারেন না। বিক্রি ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিক দু’ভাবেই জানানো হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ শাহানাজ মিথুন মুন্নী গত রোববার বিকেলে জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। লিভিং স্টোন স্কুলের জমি, স্থাপনা ও অবকাঠামো বিক্রি বন্ধে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কে নোটিশ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।