তৃপ্তি রঞ্জন সেন, খুলনা প্রতিনিধি
সারাদেশের ন্যায় খুলনার পাইকগাছাতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ১ জুন থেকে এ পর্যন্ত পাইকগাছায় ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে উপজেলায় ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জেলাব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও লোকজন স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কাই করছে না। ইতোমধ্যে পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করে দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলেও বাহির থেকে দেখে মনে হচ্ছে দোকান বন্ধ। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। অপরদিকে অসুস্থ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের পর দেরিতে রিপোর্ট পাওয়ার কারণে সংক্রমিত ব্যক্তির অসচেতনতার জন্য সংক্রমণ পরিবার পরিজনসহ বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বশেষ রাড়ুলীর হিমা বেগম এর রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন লকডাউনের কার্যকারিতা তদারকের জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে করোনায় আক্রান্ত সাংবাদিক তপন পাল, তার স্ত্রী তৃপ্তি পাল ও পৌর কাউন্সিলর সুস্থ রয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলেও উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১ জুন। কপিলমুনির সাংবাদিক তপন কুমার পাল ও শাহাপাড়া এলাকার পুলিশে কর্মরত রমজান আলী এলাকার প্রথম করোনা রোগী। এরপর ১০ জুন সাংবাদিক তপন পালের স্ত্রী ও কাশিমনগর গ্রামের রাম প্রসাদ শীল, ১২ জুন প্রতাপকাটী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদার, ১৪ জুন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ এবং কপিলমুনি এলাকার প্রসেনজিৎ ও ১৫ জুন রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম মোড়লের স্ত্রী হিমা বেগমের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। এদের সকলের বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত উপজেলায় ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হলেন সাংবাদিক তপন পাল, তার স্ত্রী তৃপ্তি পাল, পুলিশে কর্মরত রমজান আলী, রামপ্রসাদ শীল, প্রসেনজিৎ, পৌর কাউন্সিলর সেলিম আহমেদ ও রাড়ুলীর হিমা বেগম। কপিলমুনির অবসরপ্রাপ্ত আব্দুল মান্নান সরদার খুলনাতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, পৌর কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মঙ্গলবার পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর, তার পরিবারের সদস্যদের ও কর্মচারীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে লকডাউন প্রত্যাহারের পর হঠাৎ করে জুন মাসে এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ কপিলমুনি ইউনিয়নের বাসিন্দা। উপজেলায় যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের ভীতি ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মানার কারণে হঠাৎ করে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, অসুস্থ ব্যক্তির নমুনা দেওয়ার পর তার রিপোর্ট পেতে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সে কারণে উক্ত ব্যক্তির দ্বারা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অবস্থায় অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন যাদের পরিবারের সদস্যরা এলাকায় এসে স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। এর মাধ্যমেও সংক্রমণ এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। সেকারণে এখনই দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করছেন উপজেলাবাসী। সংক্রমণ রোধে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি নিষেধ যথাযথ বাস্তবায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে এলাকা ভিত্তিক লকডাউন করা, নমুনা সংগ্রহের পর দ্রুত রিপোর্ট সরবরাহ নিশ্চিত করা, অসুস্থ ও সংক্রমিত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা এবং উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর তাগিদ দিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।