নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুন্সীগঞ্জের পদ্মা পাড়ে আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে উন্নয়ন সমাবেশ ও আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার গজারিয়া পাইলট গার্লস হাই স্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় এই উন্নয়ন সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর আগে দুপুর থেকেই দলীয় নানারকম ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে সমাবেশে জড়ো হতে থাকে মানুষ। এতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে একের পর এক স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। এসময় আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অনেকে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহিউদ্দিন বলেন, সারা বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে বাঙালি জাতির জন্য।
তিনি আরও বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে পঞ্চমবারের মত শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী না করার কোন বিকল্প নেই। আগামীকাল ১০ অক্টোবর (আজ মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলায় রেল চলাচল শুরু হওয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি জেলার ১৫ লাখ মানুষের সৌভাগ্যের বিষয়। দ্রুতগতির এসব যাতায়াত ব্যবস্থা মানুষের জীবনমান ও ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত থাকবেন নেতাকর্মীরা। পদ্মা সেতুর মতো গর্ব করার মতো একটি স্থাপনা রয়েছে আমাদের জেলায়; যা বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা উঁচু করেছে। নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জয়যুক্ত করবো।
এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খাঁন জিন্নাহর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সোহানা তাহমিনা, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোঃ মহাসিন চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব ভূইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান খাঁন, জেলা আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খাঁনসহ আরও অনেকে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র ফয়সাল বিপ্লব বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে আবারো আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া কখনোই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। তাই দেশের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের স্বার্থে সকল তৃণমূল নেতাকর্মীদের এক জোট হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা বলেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গর্বের এমন অর্জন আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভেদাভেদ ভুলে সকল নেতাকর্মীদের একসাথে কাজ করে যেতে হবে। পদ্মা সেতু আমাদের মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের মানুষের গর্ব, আমাদের অহংকার। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি।
পরে সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করে তোলার আহ্বান জানিয়ে সমাপনী বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম।
আমিরুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত উন্নয়ন সহযোগী ও দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী সিদ্ধান্ত তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের উন্নয়ন, অহংকারের প্রতীক। আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, যোগ্যতা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের ফসল।
পরিশেষে উন্নয়ন সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে বক্তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে ২৯ সেপ্টেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে জামাত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় মুকবুল কমিশনারের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় অর্ধশত নেতাকর্মী রক্তাক্ত জখমের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। সেইসাথে হামলায় আহত ১০০ জন নেতা-কর্মীর মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।