একেএম বজলুর রহমান,পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাজারা ডাংগা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মতিউর রহমান সুপারের পদ থেকে অবসর যান চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। অবসর যাওয়ার পরেও তিনি দায়িত্ব ছাড়তে চাননা। অন্য কোন সিনিয়র শিক্ষক কিংবা সহ সুপারকেও দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। এমনকি মাদ্রাসার সভাপতিকেও মাদ্রাসার আয় ব্যয় সহ প্রতিষ্ঠানের সহায় সম্পত্তি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। মাদ্রাসার সুপার মতিউর রহমানের কোন অবৈধ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। কয়েকজন সংবাদকর্মী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাদ্রাসায় অবস্থান করলেও সুপারের দেখা মিলেনি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে অন্য মাধ্যমে জানা যায় তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অবস্থান করছেন। সংবাদকর্মীরা সেখানে গিয়ে তার সাথে কথা বলেন। মাদ্রাসার অফিস কক্ষের চাবি এখনো নিজের কাছে রেখেছেন। ফলে অফিসের মূল্যবান সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। অফিসের উত্তর পাশে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায। মাদ্রাসার শিক্ষকদের এ বিষযয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানান সুপার মতিউর রহমান মাদ্রাসায় যোগদান করার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই কক্ষে রাত্রি যাপন করে। কক্ষের ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তারা জানান তিনি বিনা ভাড়ায় ৩০ বছর থেকে এখানে রাত্রিযাপন করেন। মাদ্রাসার কক্ষ টিকে তিনি নিজের বাড়ি মনে করে ব্যবহার করতেছেন। এতে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে তারা জানান। সুপার মতিউর রহমান সুপারের দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের ছুটি, অফিসের কাজকর্ম ও জানয়ারি মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি। মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন মতিউর রহমান দায়িত্ব হস্তান্তর না করে বিভিন্ন তালবাহানা করতেছে। এতে তার কোনো অবৈধ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমরা মনে করি । আরেক বাসিন্দা বেলাল বলেন ২০১৫ সালে মাদ্রাসায় কৃষি শিক্ষক ও ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রার্থী না পাওয়ার কারণে ওই পদে লোক নিয়োগ করা হয়নি। তখনকার সময়ে সভাপতি ছিলেন মোকসেদ আলী এখনো তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেছেন। মাদ্রাসার সুপার মতিউর রহমান বলেন মাদ্রাসা সভাপতি মোকসেদ আলী ও কমিটির সদস্যরা আমাকে রেজুলেশন করে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দিতে মাদ্রাসা বোর্ডে আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি রেজুলেশনের কপি দেখাতে পারেননি। তবে ২০১৮ সালের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী জানা যায় যে কোন মাদ্রাসার শিক্ষকদের সনদ অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হয় তাহলে তিনি আর ওই পদে কিংবা ওই প্রতিষ্ঠান চাকরি করতে পারবেন না। কিন্তু কমিটি ওই পদে তাকে আর রাখতে পারবেন না। সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা মতিউর রহমান কে সুপার হিসেবে কেন রাখতে চান তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। অনেকে মনে করতেছেন যে এতে সুপার মতিউর রহমান ও কমিটির সদস্যদের অবৈধ কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ২৬ শে জুন উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এলাকার বাসিন্দা ইউছুফ আলী জানান সুপার মতিউর রহমান ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই তারিখে। গোপনে কৃষি ও এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। দৈনিক প্রতিদিন ও দৈনিক সোনালী বার্তা পত্রিকায়। কৃষি শিক্ষক পদে নীলফামারী জেলার এক ব্যক্তি কে এবং এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক পদে টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের এক ব্যক্তি কে চূড়ান্ত করে। তাদের নিকট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তাদেরকে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী, লাইব্রেরিয়ান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে লোক নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোপনে পূর্বের তারিখ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সে নিয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়োগ দেবেন বলে জানা যায়। এসব প্রার্থীদের কাছ থেকে সুপার, সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সুপার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বেই এই ৬ টি পদে লোক নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সুপার মতিউর রহমান তার নিজ বাড়ি জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। এটাই মনে করতেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় কয়েক জন ব্যক্তি সংবাদকর্মীদের জানান লাইব্রেরিয়ান পদে এক ব্যক্তির নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য এবং ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন লাইব্রেরিয়ান পদে তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুপার মতিউর রহমান বলেন মাদ্রাসায় আমাকে রাখার জন্য কমিটি ছয় মাসের জন্য বর্ধিত সময় চেয়ে মাদ্রাসা বোর্ডে কাগজ পাঠিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কোন নিয়ম নীতি আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার নীরব থাকেন। তিনি বলেন আমি দু-একদিনের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করব। শুক্রবার বিকালে দিনাজপুর থেকে দৈনিক প্রতিদিন ও দৈনিক সোনালী বার্তা পত্রিকার গোপনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি গুলো নিয়ে আসলে স্থাণীয় লোকজন সুপারকে আটকিয়ে পত্রিকাগুলো নিয়ে নেন। পত্রিকা নেওয়ার কারনে সুপার মতিউর রহমান আব্দুর রউফ রিপন ও ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দেন। দেবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সলিমুল্লাহ্ বলেন মাদ্রাসার সভাপতি মৌখিকভাবে আমাকে ছয় মাসের সময়ে চেয়েছেন। কিন্তু আমি বলেছি এ ধরনের কোন নিয়মে নাই। সহ সুপারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলেছি। নিয়ম অনুযায়ী তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। মাদ্রাসার সুপার বিষয়ে যদি অন্যান্য শিক্ষকরা লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।