একেএম বজলুর রহমান,পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত শুরু করেছেন। বোদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মকলেছার রহমান জিল্লু দুর্নীতি দমন কমিশনের লিখিত অভিযোগে বলেন, রবিউল আলম সাবুর ২০১০ সালে মে মাসে বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কয়েক বছরের মধ্যে দূর্নীতির মাধ্যমে শুন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক হয়ে স্কুল ও কলেজে ৪৪ জন শিক্ষক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে পাঁচজন শিক্ষক ও একজন পিয়ন দিয়েছেন। এসব শিক্ষকের নিকট থেকে ৫-৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ বিদ্যালয়ের তহবিলে কোন টাকা জমা দেননি। এমনকি জাল নিবন্ধনকারী শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন। ছাত্রীদের সেশন ও ভর্তি ফি ১১শ থেকে ১২শ টাকা আদায় করেন। কিন্তু রশিদ দেন মাত্র ৫শ টাকার। প্রতিবছর ১শ ৮০ টাকায় সুয়েটার দিয়ে ৫শ টাকা আদায় করেন। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ছবি তোলার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ৫শ টাকা আদায় করেন। পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের বোর্ড ফি বাদে অতিরিক্ত টাকা বিদ্যালয়ের হিসেবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র ও মূল সনদ নিতে ৫শ টাকা আদায় করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মা সমাবেশে কোন খরচ করেন না। বিদ্যালয়ের ৫/৭ টি মেহগনি গাছ কেটে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। বিদ্যালয়ের সোফাসেটটি নিজের বাড়িতে রেখে বাড়ির পুরাতনটি বিদ্যালয়ে দিয়েছেন। অন্য ৬/৭টি বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেছেন। একবার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে তাকে কেন্দ্র সচিব থেকে অব্যাহতি দেন জেলা প্রশাসন। নয় বিঘা জমির পরিমাণ রাজার দিঘীটি এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা হতো। কিন্তু এখন সেটা কত টাকায় কার কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে কেউ জানতে পারছেন না। বিদ্যালয়ের ৫ বিঘা জমির বাৎসরিক আয় জমা হতো বিদ্যালয়ের হিসেবে। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এমপিও ভূক্তি হওয়ার প্রথম ৭৫/৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন তিনি, যা ফেরত যোগ্য। বেশিরভাগ নিয়োগ জাল স্বাক্ষরে দেওয়া হয়েছে। সামান্য বেতনের এই শিক্ষক দুই সন্তানকে অনেক টাকা খরচ করে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। আয়ূবগঞ্জ মৌজায় ৫১ লাখ টাকায় ১০/১২ বিঘা জমি কিনেছেন। পাঁচতলা মার্কেট, বাজার মসজিদ সংলগ্ন গোডাউন ঘর, ব্যাংক ও বাড়িতে লাখ লাখ টাকা ও প্রচুর গহনা। মানুষের মনে আলাউদ্দিনের চেরাগ বলে মনে হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছি। আরো সময় লাগবে। বোদা উপজেলা বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুল আনা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে সব অভিযোগের ব্যখ্যা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় সব হিসাব। হাউজ বিল্ডিংয়ের ঋণ আছে। গত রবিবার কয়েকজন সাংবাদিককে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।