কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে গণধর্ষণের শিকার আশা মনি (১৯) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার দক্ষিণ জাল্লাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত সকল আসামিদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির জানান। এসময় ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও কয়েকশ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন রাতে নানির বাড়ি দক্ষিণ জাল্লাবাদ থেকে সাহাপুর স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা স্বামীসহ মোট সাতজন মিলে আশা মনিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সকালে আশা মনিকে উদ্ধার করে নিকলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কিশোরগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন। পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ২৮ জুন রাতে আশা মনি মারা যান। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত স্বামীসহ চার আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কারাগারে থাকা আসামিদের স্বজন ও বাহিরে থাকা আসামিরা মিলে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে বলে মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে আশা মনির মা ফাহিমা আক্তার নিজেদেরকে অসহায় দাবি করে বলেন, মেয়েটারে বেইজ্জত কইরা মাইরা ফালাইছে। অহন বিচার তো পাইতাছিনা উল্টা আসামিরা হুমকি দিতাছে মামলা তুইল্লা নিতে। এদের বিরুদ্ধে মামলা কইরে অহনে বিফদে পড়ছি।
এসময় প্রতিবেশী মোরশেদা খাতুন বলেন, ঘটনায় পরে আশা মনিরে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে মৃত্যুর আগে আশা মনি যাদের নাম বলে গেছে তাদের নামেই মামলা হয়েছে। পরে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করলেও পলাতক ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে না। এখন আসামি ও তাদের স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় আশা মনির পরিবার ও নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
মামলার বাদী আশা মনির মামা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে আশা মনির স্বামী লাল চাঁন তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য অত্যাচার নির্যাতন করে চাপ দিত। স্বামীর সহযোগী আসামিরাও রাস্তাঘাটে তাকে অশ্লীল ইঙ্গিত করতো। এ কাজে আমার ভাগ্নি আশা মনি রাজি না হওয়ায় তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামিরা। সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পরই আশা মনির স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মামলার চিহ্নিত সাত আসামির মধ্যে বাকী তিন আসামিকে গ্রেফতারে তালবাহানা করছে পুলিশ।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, মামলার ১ নাম্বার আসামি সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার রনিসহ অন্যরা প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং বাদী ও তার লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। এদিকে ৩ নাম্বার আসামি সুকন মিয়ার বোনজামাই জারইতলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চাঁন মিয়া সম্প্রতি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে ও হুমকি দিচ্ছেন। এদিকে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও হুমকির বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এ অবস্থায় বাদী হয়ে আমি ও আমার লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনসুর আলী আরিফ জানান, গণধর্ষণের খবর পেয়েই জড়িত চারজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকী আসামিদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হুমকির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।