নরসিংদী প্রতিনিধি
কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় নরসিংদী জেলার কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। জেলার প্রায় সকল গ্রামেই বর্তমানে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সবুজের মাঠ জুড়ে সরিষা আর সরিষা। আবহাওয়া অনুকূল থাকার কারণে এবার অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরিষার চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম হওয়ায় অনেক কৃষক এ ফসল চাষে ঝুঁকেছেন। সরিষা তোলার পর একই জমিতে বোরো ফসলও আবাদ করা যায়। সরিষা বেলে ও দোআঁশ মাটিতে ভাল হয়। সরিষা চাষে প্রচুর রোদ, কম তাপমাত্রা ও জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে ফলন ভাল হয়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও মাটিতে রসের অভাব হলে বীজের আকার ছোট হয় ও বীজে তেলের পরিমাণ কমে যায়। এজন্য বাংলাদেশে রবি মৌসুমেই সরিষার চাষ করা হয়ে থাকে। কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সরিষা বপনের সময়। সরিষার বীজ ছোট বলে কমপক্ষে ৩টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরী করতে হয়। জমিতে যাতে বড় বড় মাটির ঢেলা ও আগাছা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। জমিতে সারি সারি করে ও ছিটিয়েও সরিষার বীজ বপন করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় ৫ হাজার ৭শত ৮৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০৪ হেক্টর বেশি। চলতি সরিষা মৌসুমে নরসিংদী জেলায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমি।
অন্য চারটি উপজেলার থেকে নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলায় অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়। সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর, পলাশ উপজেলায় ৯৫ হেক্টর, শিবপুর উপজেলায় ১৬৩ হেক্টর, মনোহরদী উপজেলায় ২৬৫ হেক্টর, বেলাব উপজেলায় ২২১ হেক্টর ও রায়পুরা উপজেলায় ১ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ জুড়ে সরিষার সমারোহ। চারদিকে শুধু সরিষা আর সরিষা। চাষিরা জানান, আমন ধান কাটার জমি কিছুদিন পরিত্যক্ত থাকে। ওই জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে অধিকাংশ জমির সরিষা পরিপক্ক হওয়ায় অনেক কৃষকই সরিষা জমি থেকে তুলে মাড়াই শুরু করেছেন।
রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের বিল্লাল মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। ফলন হয় কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মণ। যা ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
রহিমাবাদ গ্রামের কৃষক অহিদ মিয়া জানান, এবার প্রায় ১০০ শতাংশ জমিতে বারী ১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছি। যা বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ জানান, সরিষা চাষে কৃষকরা যেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এটি কৃষিক্ষেত্রে সরকারের আরো একটি বড় সাফল্য। দেশী জাতের সরিষা ৬০ থেকে ৭০ দিন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা উঠতে সময় লাগে ৭৫ থেকে ৮০ দিন। তিনি আরো বলেন, সরিষার আবাদ বৃদ্ধি হলে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়বে এবং তেলের আমদানির নির্ভরতা কমে আসবে।