নেত্রকোনা সংবাদদাতা : গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। গাওঁকান্দিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও রাস্তার উপর কোথাও হাঁটু ও কোমর পানি জমে আছে। বেশিরভাগ পরিবারে ঘরের ভিতরে হাঁটু পানি। ওই ইউনিয়নের বেশিরভাগ সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবার আতঙ্কে ভুগছেন। সাধারণ খেটে খাওয়া গণ মানুষের চিন্তা মাথায় রেখেই মানবিক ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান খাদ্য সামগ্রি নিয়ে বন্যার্তদের বাড়িতে পৌঁছে যান। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের চিতলী চরপাড়া গ্রামে এ খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাড়ে ৭ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা ও ৪.১ হেক্টর সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। তবে এরকম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণটা সঠিকভাবে নিরুপণ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত কত হেক্টর পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুন্ডু। তিনি বলেন, কোন কৃষক আমাকে কোন তথ্য দেয়নি। তবে আমি চেষ্টা করবো তথ্যটি সংগ্রহ করার জন্য।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নেতাই নদীর উজানে ভেঙে যাওয়ায় প্রবল স্রোত ও নদীর বেড়ি বাঁধ না থাকায় উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দউষান,ভাদুয়া,জাগিরপাড়া,শ্রীপুর সহ ১২টির বেশি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। বন্দউষান গ্রামের ইসলাম উদ্দিন ও সমর আলী উদ্দিনের বাড়ি ঘেঁষে ওই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই গ্রামের সবকটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একবারে ভেঙে পড়েছে। নৌকা ও কলার ভেলা তৈরি করে মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন পানি বন্দি পরিবার গুলো। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বেশক’টি শিক্ষা প্রতিষ্টান,ভাদুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দ উষান বাজার, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার সংশ্লিস্টদের সহযোগিতা কামনা করছেন ঐ গ্রামের শত শত মানুষ। ফসলি আমন রোপণকৃত বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, বাজার,মসজিদসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার শঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব উল আহসান বলেন, ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। আমরা দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা জিআর প্রকল্পের আওতায় কোভিড-১৯ ও পানিবন্দি এলাকায় ২শ ৬০টি খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। যদি পানি কমে যায়, তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠতে পারবো।