আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ-অভিমান সহ্য করতে না পেরে অবশেষে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ এবং আশিষ সাহা ইস্তফা দিয়েছেন। শাসক দলের এই বিধায়করা প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের ইস্তফার খবরে স্তম্ভিত ত্রিপুরাসহ দেশের বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো।
সোমবার ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সে অবস্থিত রাজ্যের বিধানসভা ভবনে গিয়ে অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তীর কাছে তারা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফার কথা জানান এবং পদত্যাগপত্রও জমা দেন। পরে সেখান থেকেই তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজধানী দিল্লিতে রওনা দেন। যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তেমন কোনও কথাই বলেননি তারা।
এদিকে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেও তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রতন চক্রবর্তী। এরপর যদি দেখা যায় যে, সংবিধানের আইন অনুযায়ী যথাযথ নিয়ম মেনে তারা পদত্যাগ করেছেন তবে তা গ্রহণ করবেন তিনি। রতন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।
এই দুই বিধায়ক বিজেপি দলের সদস্য পদ থেকেও ইস্তফার কথা জানিয়েছেন। ইস্তফাপত্র ইতোমধ্যেই তারা পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত কিছুই জানাতে চান না তবে দিল্লি থেকে ফিরেই সব খোলসা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়েও নানা সময়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখেও সমাধান করতে পারছিলেন না। বেকার থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষের মধ্যে যেভাবে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে তা সহ্য হচ্ছিল না তার। অসহ্য যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তিনি বলেন, আজ নিজেকে অনেকটাই হালকা মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। এর কারণ রাজ্যে একক ব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। এক একজন মন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও কাজের বেলায় হাত বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের। হাতে গোনা কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার মর্জি মাফিকই রাজ্য চলছে।
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে অপর বিধায়ক আসিস সাহা বলেন, বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়েও মানুষের স্বার্থে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমান সময়ে শাসক দলে থেকেও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। এমনকি সংবাদমাধ্যমগুলোকে পর্যন্ত আক্রমণ করা হচ্ছে। এদিক থেকে সব অংশের জনগণকে তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, দিন যতোই গড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্য বিধানসভায় বিধায়কদের শক্তি ততোই ক্ষীণ হতে শুরু করেছে। এর আগেও বিধায়ক আশিস দাস সরাসরি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। যদিও শেষ সময়ে বিধায়ক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে শাসক দলের শরিক আইপিএফটির বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মাও দল থেকে ইস্তফার কথা জানিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বিধায়ক পদ থেকে সরানো হয়নি।