শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা। জোয়ার-ভাটার নদীগুলো এখানকার প্রাণ। জোয়ার-ভাটার ব্যবধানকে ব্যবহার করে মানুষ এখানকার সভ্যতা গড়ে তোলে। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই সভ্যতা, জনবসতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা আজ জলাবদ্ধতার প্রকোপে হুমকির সম্মুখীন। এ অঞ্চলে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, স্বতন্ত্র জীববৈচিত্র্য, অসংখ্য খাঁড়ি নদী ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নদী বিধৌত প্লাবন ভূমি যা প্রতিদিন দুইবার সমুদ্র জোয়ারে প্লাবিত হয়। এ অঞ্চল দেশের মূল ভূখন্ড নয় বা তার সম্প্রসারিত অংশও নয়। যদিও এটি উপকূলীয় এলাকা তবুও দেশের অন্যান্য উপকূল এলাকা থেকে এর বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হলো অনন্য। জোয়ার ভাটার এই প্লাবনভূমি এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। এখানকার জলাভূমির জোয়ার-ভাটার গভীর খাড়ি নদীগুলো সাগর থেকে জোয়ারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে পলি বহন করে। উপকূলীয় বাঁধ হওয়ার আগে জোয়ার-ভাটার প্লাবনভূমিতে এই পলি অবক্ষেপিত হতো। জোয়ারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জলরাশি নদীর দুকূল ছাপিয়ে প্লাবন ভূমিতে উঠতো এবং তীব্র স্রোতে ভাটায় তা ফিরে যেতো। ভাটার সময় তীব্র স্রোতের কারণে নদীর তলদেশে পলি জমতে পারতো না। এই প্রক্রিয়ায় ভূমি গঠনের পাশাপাশি জোয়ার-ভাটার নদীগুলোর নাব্যতা ও গভীরতা বজায় থাকতো। কিন্তু বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে বাস্তবায়িত উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পে (ঈঊচ) এলাকার এই বিশেষ ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, জোয়ার-ভাটার নদীগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও অধিক ভঙ্গুর প্রতিবেশকে যথাযথভাবে বিবেচনায় আনা হয়নি। এ প্রকল্পে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নদীগুলোকে তার জোয়ার ভাটার প্লাবণভূমি থেকে আলাদা করা হয়েছে। এ কারণে পোল্ডার পরবর্তী সময়ে কেবল নদীর মধ্যে বিশেষ করে নদীর প্রান্তসীমায় পলি জমে নদীসমূহ দ্রুত ভরাট হয়ে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জনগণের আন্দোলন ও জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) গ্রহণ হেব, ভদ্রা, হামকুড়া ও আপার শোলমারী নদী এবার হলেও বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলে পারছে তা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানের মানবাধিকার জনগণ বিভিন্ন উপায়ে সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করতে থাকে। জানাগের ভাবীর মুখে সরকার এ সমস্যার সমাধানের জন্য ৮০্#৩৯;র দশকে এশিয়া উন্নয়ন কামরানের উবি)-এর আর্থিক সহযোগিতায় কেসিজারপি ও সিইআরপি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই এলাকার জনগণ জলাবদ্ধতা সমাধানের প্রস্তাব হিসেবে খাল খনন, বাঁধ-বন্দী ও এইসগেট নির্ভর প্রকল্প বাতিল করে পলি ভরাটে বিল উঁচু করার দাবী জানায়। স্থানীয় এবার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি ও পলি ভরাট করে জলাবদ্ধ নীচু দিল উঁচু করার দাবীতে ১৯৯০ সালে আন্দোলনের মুখে পোল্ডার ও পাঁকা রাস্তা কেটে হামকুড়া ও শৈলমারী নদীর সাথে বিল ডাকাতিয়ার সংযোগ করে দেয়। এতে নদী দ্#ু৩৯;টির বাধ্যতা ও প্রশস্ততা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং বিলের মধ্যে পলি জমে প্রায় ২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ২ মিটার উঁচু হয়। পরে ১৯৯৩ সালে সরকার জনগণের কাটা বাঁধের অংশগুলো বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে সে বছরই পলি ভরাটে হামকুড়া নদীর অপমৃত্যু হয়।
১৯৯৬ সালে সরকার কেজেডিআরপি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। জনগণ সরকারের পূর্বে বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পের অভিজ্ঞতার কারণে বড় বড় বাঁধ ও সুইসগেট নির্ভর কোন প্রকল্পে আস্থা স্থাপন করতে পারেনি। নতুন প্রকল্পে কার্যকরী কোন সমাধান না থাকায় জনগণ কেজেডিআরপি বাতিল করে জোয়ার-ভাটার নদী ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক এ অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপযোগী প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানায়। সমস্যা সমাধানে এক পর্যায় এলাকার জনগণ নিজেদের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে বিল ভায়নায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর বাঁধ কেটে সরাসরি নদীর সাথে সংযোগের মাধ্যমে অবাধ জোয়ার-ভাটা চালু করে। জনগণ জানতো অবাধ জোয়ার প্রবাহ প্লাবনভূমিতে (বিলের মধ্যে) প্রবেশ করতে দিলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে, পলি প্লাবনভূমিতে অবক্ষেপিত হয়ে ভূমি উঁচু হবে এবং জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। বাস্তবেও প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। বিল ভায়নায় পলি অবক্ষেপিত হয়ে প্রায় ২ মিটার ভূমি উঁচু হয়। নদী গভীর ও প্রশস্ত হয় এবং এলাকার জলাবদ্ধতার নিরসন ঘটে। ঐ সময়ে এ অঞ্চলের কর্মরত বেসরকারী সংস্থাসমূহ ও জনগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এডিবি এবং বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে সরকারের গবেষণা সংস্থা সিইজিআইএসকে দিয়ে কেজেডিআরপি এলাকায় ইআইএ ও এসআইএ হবে।